কামতেশ্বরী মন্দির

কোচ কামতার মহারাজা প্রাণনারায়ণের রাজত্বকালত বিভিন্ন মন্দির প্রতিষ্ঠা। 

মহারাজা প্রাণনারায়ণ (১৬৩২-১৬৬৫)

মন্ত্রী: ভবনাথ কার্যী 


মহারাজা প্রাণনারায়ণ ১৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে সিংহাসনত বৈসেন। কিন্তুক রাজ্যচালনার বিচক্ষণতা না থাকাতে উমার সমায়ৎ বারেবারে কোচ  কামতা রাজ্য বিপদের সম্মুখীন হৈচিল। জ্ঞাতি গোষ্ঠীর সোদেও প্রায়শই যুদ্ধ নাগি  শক্তিক্ষয় করছিলেন। ১৬৩২ খ্রীষ্টাব্দের একটা মুদ্রা আবিষ্কৃত হওয়ায় আর ‘নারায়ণী মুদ্রা’ অধ্যায়ত প্রাণ নারায়ণের উল্লেখ থাকাতে উমার সিংহাসনত বৈসা নিয়া ঐক্যমতে পৌঁছানাে যায়। ১৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে বীর নারায়ণ বাচি ছিল। সেই বছরত পিতার দেহত্যাগের পরই প্রাণ নারায়ণ রাজ্যভার গ্রহণ করিলে রাজ্যারম্ভের কাল বিষয়ে  সন্দেহ কাটে। কিন্তু কোন্ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেছেন যে বিষয়ে ভিন্ন মত আছে। মহারাজা প্রাণ নারায়ণ কর্তৃক রামচরণক দূত হিসাবে আসামত পাঠেবার উল্লেখ আছে, কিন্তুক সমায়ের উল্লেখ নাই।

কামতেশ্বরী মন্দির, গোসানীমারি

১৬৬১ খ্রীষ্টাব্দে ঢাকার নবাব মীরজুমলা (বাংলার সুবেদার) কোচ কামতা আক্রমণ করি বিনাযুদ্ধে রাজধানী অধিকারত আনেন। বদলা হিসাবে এই আক্রমণ ছিল বুলি ইতিহাসত ধরা হয়। কারণ, ইয়ার আগত আসাম আক্রমণ করি বিফল হৈলে প্রাণ নারায়ণ নিজে মােগলের অন্যতম কেন্দ্র ঘােড়াঘাট (দিনাজপুর জেলার পূবে) আক্রমণ করেন আর তার সাথত বাংলার রাজধানী ঢাকা নগর দখল করি নেন। ১৬৬৪ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসত মীরজুমলার পরের সুবেদার কোচবিহার রাজ্য জয় করার করার পরিকল্পনা করিলে রাজ্যক নিরাপদ রাখার জন্যে প্রাণ নারায়ণ বশ্যতা স্বীকার করেন, আর পণ হিসাবে ৫ লক্ষ মুদ্রা পাঠেবার প্রস্তাব করেন। মহারাজার দেওয়া সেই কর ১৬৬৫ খ্রীষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর বাদশাহেরটে পৌছি দেওয়া হৈচিল। History of Aurangzeb’ গ্রন্থ অনুসারে জানা যায়, এই পণের টাকা সম্ভবতঃ মােগল দরবারের ঐতিহাসিকদের লেখায় ‘কর’ বা Tribute’ এ পরিণত হয়েছে। ১৬৬৫ খ্রীষ্টাব্দেই প্রাণ নারায়ণের মৃত্যু হয়।

রাজার অধিকৃত অঞ্চল ছিল ৬০০০ বর্গমাইল। সীমানা ছিল পূবে গােয়াল পাড়া জেলার খুটাঘাটের বগলত বসকরপুর, পশ্চিমত মরঙ্গের ভাটগাঁও, দক্ষিণত তাজহাট আর বাহারবন্ধ পরগণা। প্রাণনারায়ণের সমায় আঠারোকোঠা আর মন্ডলাবাস ছিল কামতার রাজধানী। 

বিষ্ণু নারায়ণ, মােদ নারায়ণ আর বসুদেব নারায়ণ নামে তিন বেটা ছিল মহারাজা প্রাণনারায়ণের । বিষ্ণু নারায়ণ ছিল বড় বেটা। 

মহারাজা প্রাণ নারায়ণ বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। রাজা বীর নারায়ণ যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করছিলেন, তারে প্রসার আর ওসার ঘটান রাজা প্রাণনারায়ণ । ‘পঞ্চরত্ন পন্ডিত’ সভা ছিল উমার রাজদরবারত। কর্মচারী থাকি শুরু করি সভাসদলার সগায় ছিল সংস্কৃত জানা। মহারাজা প্রাণনারায়ণ নির্দেশে কবিরত্ন ‘রাজখন্ডম’ নামে এখান ইতিহাস সংস্কৃত ভাষাত রচনা করছিলেন। শ্রীনাথ ব্রাহ্মণ মহাভারতের পদ আর ‘দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর’ কাব্য রচনা করছিলেন রাজার আদেশেত। এছাড়া উমরা ‘বিশ্বসিংহ চরিতম, মহাভারতে আদিপর্ব ‘দ্রোণপর্ব লেখছিলেন। এই সমায়তে দ্বিজ রামদাস মহাভারতের পদ আর উমার বেটা কৃষ্ণ মিশ্র ‘প্রহ্লাদ  চরিত’ রচনা করেন।

দামােদরদেবচরিত’ অবলম্বনে রাম রায় লেখেন ‘গুরু লীলা’, বিশারদ কবি ‘বিরাট পর্ব’ আর ‘কর্ণ পর্ব’  অনুবাদ করেন। প্রাণ নারায়ণ নিজেও সংস্কৃত ভাষার ব্যকরণ ও

সাহিত্যে পণ্ডিত ছিলেন। এছাড়া স্মৃতি শাস্ত্রতও  তাঁর যেমন বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল, তেমনি নিজের ল্যাখা সঙ্গীত বিষয়ক প্রন্থও ছিল। শ্রীনাথ ব্রাহ্মণ লেখেন,

“মহারাজ কাব্য সঙ্গীতের দীক্ষাগুরু।

দরিদ্র জনায় জাঞ বাঞ্ছা-কল্প-তরু।” (আদিপর্ব)।

প্রাণ নারায়ণের পান্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে মহারাস্ট্রীয় পন্ডিত জগন্নাথ ‘প্রাণাভরম কাব্য’ এবং জয়কৃষ্ণ ভটাচার্য্য ‘প্রয়ােগ রত্নমালা’ ব্যকরণের ‘প্রভা প্রকাশিকা’ টীকা রচনা করছিলেন।

জলপাইগুড়ি জেলার ‘ভিতরগড়ত থাপিত বােদেশ্বরী বিগ্রহের সেবা পূজার জন্যে উমরা ভূমিদান করছিলেন।

 উমরা কোচবিহারের ষন্ডেশ্বর ও বাণেশ্বর শিবমন্দির নির্মান অথবা পুনরায় নির্মান করেন। 

মহারাজা প্রাণনারায়ণের সমায়ে জনগনের সুবিধার জন্যে অনেক রাস্তা আর সাকো নির্মান হৈচিল। শিল্পকার্য্যতও যথেষ্ট উন্নতি সাধন হৈচিল উমার সমায়ে। রাজ উদ্যান ছিল খুব সাজানো গুছানো, রাজপ্রাসাদের ভিতরা পাঠাগার, গাওধোওয়ার জাগা, অন্তপুর, নির্জনাবাস ছিল যা মীরজুমলার সহযাত্রী আর প্রত্যক্ষদর্শী ঐতিহাসিক শিয়াবুদ্দিন মহম্মদের ল্যাখাত পাওয়া যায়। 

মধুপুরের চতুর্ভূজ, শ্রীরামপুরের মদনমােহন, কাগজকুটার চতুর্ভূজ, বনমালীপুরের বনমালী, দামােদরপুরের মদনগােপাল এইনাকান মেলা বিগ্রহ থাপন করছিলেন।  মানষির মুখত শোনা কথা, বাণেশ্বরের ডিগি খুরি ডিগি হাতে ভ্যার তােলার সমায় ভালে কয়টা দেবীমুর্ত্তি পাওয়া গেচিল। ১৬৬৫ খ্রীষ্টাব্দে কামতাপুরের (গোঁসানীমারী) কামতেশ্বরী (গােসানী) বর্তমান মন্দিরটা নির্মান করেন এবং মন্দিরের দ্বারলিপিত তাঁর কীর্তি লিপিবদ্ধ করেন। কামতেশ্বরীর সেবাপূজার জন্যে ভাইল্যা জমি দান করছিলেন বুলি জানা যায়। 

জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িত জল্পেশ্বর মন্দির নির্মাণের জন্যে দিল্লী থাকি কারিগর আনি কাজ শুরু করেন।  তবে জল্পেশ্বর মন্দিরের নির্মান শ্যাষ হওয়ার আগতে উমরা পরলোক গমন করেন। 


# Maharaja prannarayan # Baneshwar Shiva temple # Jalpeshwar Shiva temple # Coochbehar tourism # bhabanath karjee # Gosanimari # kamteshwari temple # kamtapur # Atharokotha # Mandalabas # Mirjumla # Koch Rajbanshi # history of koch kamta # Bishnunarayan # Modnarayan # Bir narayan