মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ এর বিয়াও সুনিতী দেবীর সাথত – এক মহাকেচাল। Royal Wedding of Maharaja Nripendra Narayan

কুচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সাথত সুনিতী দেবীর বিয়াও (Royal Wedding of Maharaja Nripendra Narayan with Sunity Devi) নিয়া ভালে কেচাল হৈচিল। বিয়াও বা কেচালের কতা পরে আলোচনা করা যাউক, আগত নৃপেন্দ্রনারায়ণের বিয়াও ঠিক হঠাৎ করি ওত্তিখোনো মানে কলিকাতাত হৈল্ কেংকরি সেইটা কওয়া যাক।

নৃপেন্দ্রনারায়ণের আগত যত মহারাজা ছিল সগারে বিয়াও মোটামুটি এত্তিকারে কোনো জমিদারের বেটি বা কামরুপ-কামতা (উদাহরণ হিসাবে যদুনাথ ঈশোরের বেটি) আর নেপালের কোনো রাজার বেটির সাথতে হৈচিল। মহারাজার শৈশবও কিন্তুক মাওছাড়া বা পরিবারের মানষি ছাড়া বোর্ডিং স্কুলত হৈচিল।

মহারানী সুনীতি দেবী

মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের আগত মহারাজা শিবেন্দ্রনারায়ণ বা তারও আগত মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ (Maharaja Harendra Narayan) ছিল। লাহিরী বাবু আর জয়নাথ ঘোষ (Jaynath Ghosh) ছিল হরেন্দ্রনারায়ণের সমায় দেওয়ান আর কালিকা দাস দত্ত ছিল মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সমায় দেওয়ান, বাবু যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী ছিল অফিসার। মোট কতা 1800 সাল থাকি যদি দেখি- ব্রিটিশ আসিছে আর উমরা সাথত বাঙালি অফিসার ঢুকাইছে কুচবিহারত। ইতিহাস পড়ি যদ্দুর জানা যায় যে হরেন্দ্রনারায়ণ ছিল স্বাধীনচেতা টাইপের মানে উনার বাপ ঠাকুর্দার নাকান হবার চাইছিল (স্বাধীন কুচবিহারের মহারাজার নাকান, কোনো বাধ্যবাধকতা নাই), কিন্তুক তার আগত 1773 সালত যে চুক্তি হৈচিল ঐজন্যে চুক্তি হিসাবে, ব্রিটিশ পলিসি মানি চলা খাইবে আর খাজনা টাইম টু টাইম দেওয়ায় খাইবে।

সমস্যা হৈল্ মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ খাজনা ঠিকঠাক দিতনা বা দিবার চাইতনা, নিজস্ব স্টাইলে চলার চেষ্টা করিত। কারন খাজনার চাপ নেওয়া মানে জোতদার, জমিদার আর গিরিলার উপরা চাপ দেওয়া কিন্তুক ঐলার বেশীরভাগে তো কোনো না  কোনও ভাবে রাজপরিবারের সাথত যুক্ত আর সেলা মানষিই বা কত ছিল? 

যাইহোক এই পরম্পরাগত সমস্যা দূর করির জন্যে যদ্দুর মনে হয় বাঙালি অফিসার আর ব্রিটিশ অফিসারলা ঠিক করিচে যে মাইনর কিং বা নাবালক রাজাক যদি হামরা হামার মনের মতন গড়ি তুলি তালে হামার পরবর্তীতে অফিসিয়াল কাজ চালাইতে অসুবিধা কম হৈবে। ঐজন্যে মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণক ছোটোতে বাড়ি হাতে দূরত বোর্ডিং স্কুলত পাঠে দিচে। মানে পরিবারের পরিবেশ আর মানষিলার থাকি দূরত। এবার মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের বিয়াও, এটাও যদ্দুর মনে হয় বাঙালি অফিসার বিশেষ করি বাবু যাদব চন্দ্র চক্রবর্তীর চাল। সেই চাল চালিছে বাবু যাদবচন্দ্র,  যাতে বঙ্গ কালচার রাজবাড়ির ভিতরা ঢুকি দেওয়া যায় আর এইটা করির পাইলে কেল্লা ফতে। হ্যা আক্ষরিক অর্থে কুচবিহারের কেল্লা ফতেও হৈচে রাজনৈতিক আর সাংস্কৃতিক ভাবেও। কারন 1800  সাল থাকি বাঙালি অফিসারলা থাকিলেও রাজবাড়ির ভিতরা আর গোটায় কুচবিহারত ছিল কামতা কালচার।

মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের দিদি আনন্দময়ী দেবী নৃপেন্দ্রনারায়ণক “কাচুয়া” করি ডেকাইচিল। কলকাতায় ডাকা হয় “খোকা” করে। বিয়াওর ঘটক ছিল বাবু যাদব চ্ন্দ্র চক্রবর্তী, উমরায় ব্রিটিশ অফিসার মিঃ ডালটন আর মিঃ নেলারের কানত ঢুকাইছে ব্রাহ্ম সমাজের হর্তা কর্তা বাবু কেশব সেন এর বেটি সুনিতী দেবীর কতা। ব্যস সেই হিসাবে কৈনা দেখা, কৈনা পছন্দ আর বিয়াওর সানাই বাজা।

মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুর

বিয়াওর আগের দিন ট্রেনত তারপর বজ্রা আর পালকিত করি সগায় আসি পৌছিছিল কুচবিহারত, কৈনার বাপ, মাও, ঠাকুমা আরো কয়েকজন। এবার কতা হৈল্ বিয়াওটা কোন মতে হৈবে ব্রাহ্ম মতে না হিন্দু মতে। সুনিতী দেবীর ঠাকুমা কয় ব্রাহ্ম মতে আর মহারাজার ঠাকুমা কয় হিন্দু মতে। বিয়াও শুরু হওয়ার আগত্  মহারাজার ঠাকুমা কামেশ্বরী দেবী (Grand mother Kameshwari Devi) সুনিতী দেবীক একটা সোনার মূদ্রা দিচিল আর কৈচিল যে ঐ সোনার মূদ্রাটা রাজপরিবারের যে পুরোহিত উমাক দিবার। কিন্তুক সুনিতী দেবীর ঠাকুমা কয় না এই কাজ উমায় করিবে না। অর্থাৎ চলি আইসা যে পরম্পরা সেটা আর চলিবে না। কামতেশ্বরী দেবী কৈচিল এটা তো তেমন কিছু ব্যাপার না। তাও কিন্তুক সুনিতী দেবী সোনার মূদ্রাটা পুরোহিতক দেয় নাই, পরিবর্তে ঐটা মাটিত থুইচিল। এই নিয়া তর্কাতর্কি ভালে হৈচিল, গুরুগম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি হৈচিল। বিয়াও প্রায় হয়না।

মহারাজার ঠাকুমা এটাও কৈচিল যে হিন্দু মতে বিয়াও না হৈলে মহারানী হয়া উঠির পাইবেনা। সুনিতী দেবীর মাওয়েরও কম চোট ছিলনা, কৈচিল মহারাজার  সাথত বিয়াও না হয় নাই ত্যাং হিন্দু মতে বিয়াও দিম না বেটির। এই কতাটা শুনি মহারাজার ঠাকুমা আরো গরম হয়া গেচিল। সাকাল থাকি সৈন্ঝা হয়া গেইচে এই ডান্ডা কেচাল নিয়া, সানাই বাজনা যা ছিল সৌগ বন্ধ হয়া গেচিল, বিয়াও বাড়ি ছ্যাঙছ্যাঙা হয়া গেচিল। বাবু কেশব চন্দ্র খুব টেনশনত ছিল। লাইট, বাতি যা ছিল কুল্লায় অ্যাক অ্যাক করি বন্ধ হয়া গেচিল। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের কানত ততক্ষণ পৌছি গেইচে এই কতা। নিশা রাইতত মহারাজা কয় মুই থাকির গেলুং যদি এই কৈনাক বিয়াও করা খায় তালে মোক জাগে তোলেন। আর যদি এই কৈনাক বিয়াও করের না পাং তালে আর কাংওকো বিয়াও করাইম না।

কোচবিহার রাজপ্রাসাদ

এদি ফির যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী বাবু আর মিঃ ডালটন এর টেনশন, যেই করি হোক বিয়াও আজি রাতিতে দেওয়ায় খাইবে নাহৈলে নাক কাটা যাইবে। আর অ্যাকটা মাত্র লগ্ন আছে ভোর 3টার সমায়। সুনিতী দেবীর বাবা কেশব চন্দ্র সেন মহাশয়ের টেনশন চরমে। 

শ্যাষম্যাশ হিন্দু রীতিনীতি আর ব্রাহ্ম সমাজের কিছু জিনিস মিশল করি বিয়াও হৈচিল রাতি 3টার সমায়। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ আধুনিক কুচবিহারের রুপকার ছিল। অ্যালাকার যে রাজবাড়ি এটা নৃপেন্দ্রনারায়ণের আমলে বানানো। তাঁর আমলত মেলা স্কুল, কলেজ হৈচিল কুচবিহারত। 18 সেপ্টেম্বর উমার মৃত্যু বার্ষিকী। 
জন্ম: 4 অক্টোবর 1862

মৃত্যু: 18 সেপ্টেম্বর 1911

©VSarkar

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *