নারায়ণী রেজিমেন্ট ও তার ভবিষ্যৎ - সংক্ষেপে আলোকপাত। Narayani Regiment Coochbehar

0
নারায়ণী সেনা রেজিমেন্ট

১৯৪৯ সালের ৩০শে আগস্ট মিঃ ভি.পি. মেনন (Adviser, Minister of States, New Delhi) কুচবিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র ভুপ বাহাদুরের কাছে যে চিঠি [ ফাইল নম্বর/ No. F.15(19)-P-/49 dated 30/8/1949] টা পাঠিয়েছিলেন তাতে নারায়ণী সেনার ব্যাপারে ভবিষ্যৎ প্রস্তাবনা কি ছিল তা পরিস্কার ভাবে লেখা ছিল।

কুচবিহার কে ভারতের সাথে যুক্ত করার ব্যাপারে যে এগ্রিমেন্ট হয়েছিল মহারাজার সাথে তার পরবর্তী সংযোজন হিসেবে এই পত্রটি ভি. পি মেনন সাহেবের ছিল।

কি ছিল সেই চিঠিতে?

তাতে লেখা ছিল “১২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৯ এর পর থেকে কুচবিহার স্টেট ফোর্সের দায়িত্ব ভারত সরকার নেবে। যদি সেই ফোর্স থেকে কাউকে যদি ডিসচার্জড করা হয় তাহলে সে পেনশন অথবা গ্রাটুয়িটি অথবা কমপেনসেসন পাবে যা কুচবিহার স্টেট নিয়মে আছে।” 

“ভারত সরকার সচেষ্ট থাকবে ভারতীয় আর্মির সাথে যুক্ত হলেও ‘নারায়ণ’ শব্দটি কুচবিহার স্টেট ফোর্সের সাথে যুক্ত রাখতে।”

ঐ চিঠিতে আরো যেগুলি পয়েন্ট ছিল তা বিশেষত মহারাজার পরিবার আর প্রোপার্টি বিষয়ক। তার মধ্যে যেমন –

১. কুচবিহার রাজ্য চিফ কমিশনারের আন্ডারে কেন্দ্রীয় ভাবে পরিচালিত হবে।

২. কুচবিহারের রাজমাতাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভাতা (allowance) দেওয়া হবে এবং তা কুচবিহার রাজ্যের রেভিনিউ থেকে দেওয়া হবে।

৩. পর্যাপ্ত পরিমানে গার্ড নিযুক্ত থাকবে রাজপরিবারের সদস্য ও প্রাসাদের রক্ষার জন্য। 

৪. মহারাজার কোন জমি বা বাড়ি অধিগ্রহণ করা হবেনা ওনার অনুমতি ছাড়া বা পূর্ণ কমপেনসেসন প্রদান ব্যতিত। 

৫. স্টেট পাওয়ার হাউস থেকে ইলেকট্রিসিটি সরবরাহ করা হবে মহারাজা এবং পরিবারের প্রধান বাসগৃহে এবং তা করা হবে ফিক্সড রেট এ। ভারত সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে আগেই সবকিছু ব্যবস্থা করা হবে।

৬. কুচবিহারের বিভিন্ন মন্দির ও দেবত্তোর সম্পত্তি ট্রাস্ট এর আন্ডারে রাখা হবে, এই ট্রাস্ট এর সভাপতি থাকবেন মহারাজা স্বয়ং। ৩ জন নমিনি থাকবে মহারাজার পক্ষ থেকে, ২ জন নমিনি থাকবে সরকারের পক্ষ থেকে। রাজ্যের সমস্ত মন্দিরের ইনচার্জ হবে এই ট্রাস্ট। রাজ্যের ভিতর বা বাইরের সমস্ত মন্দিরগুলিরও তত্ত্বাবধানে থাকবে এই ট্রাস্ট। জমিনদারী প্রথার অবলুপ্তির পর সমস্ত দেবতার প্রোপার্টি ট্রাস্ট এর আন্ডারে চলে আসবে, সরকার এই ব্যাপারটা অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে যেন ট্রাস্ট এর কাছে পর্যাপ্ত সম্পদ থাকে যাতে সব কাজ সুষ্ঠ ভাবে করতে পারে।

৭. মহারাজা তার পুত্র ও কন্যার বিবাহের জন্য ট্রাস্ট বানাতে পারে।

৮. সিভিল লিস্ট রিজার্ভ ফান্ড (Rs. ১০৬০৯০০/) মহারাজার প্রাইভেট প্রোপার্টি হিসাবে থাকবে।

৯. দশেরা বা অন্যান্য পার্বণের জন্য কাস্টমারী দরবার ও ট্রুপ নিযুক্ত থাকবে রাজ্যের রাজধানীতে যা আগেও ছিল।

১০. ভারতীয় সেনায় মহারাজার বর্তমান পদাধিকার অপরিবর্তিত থাকবে

কুচবিহার ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার পর আরো ২০ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ বেঁচেছিলেন কিন্তু কখনো রাজনৈতিক ভাবে নারায়ণী সেনা নিয়ে কথা বলেন নি। অবশ্য কংগ্রেস সরকার বরাবরই ভারতের রাজপরিবারদের বিরুদ্ধেই ছিল। যে সমস্ত রাজ পরিবার কংগ্রেস সরকারের সাথে মিশে গিয়ে রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তারা পরবর্তীতে নিজেদের সম্পত্তির কিছুটা ধরে রাখতে পেরেছিলেন। কুচবিহার ও জয়পুর রাজ পরিবার কংগ্রেসে যোগ দেননি। কুচবিহারের রাজপরিবারের সদস্যরা অবশ্য রাজনীতিতেই অংশ গ্রহণ করেনি একমাত্র মহারানী গায়ত্রী দেবী ছাড়া। মহারানী গায়ত্রী দেবী স্বতন্ত্র দলের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পরেও কংগ্রেস বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধীর রোষানলে পরে জেলও যেতে হয়েছিল বেআইনি ভাবে সম্পত্তি রাখার জন্য। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি বেআইনি হয় আইন যখন মডিফিকেশন করা হয়!

 নারায়ণী সেনা বা রেজিমেন্ট নিয়ে প্রথম দাবী তোলা হয় গ্রেটার কুচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাও ৯ এর দশকের শেষের দিকে। শ্রী অরুন কুমার রায় সরকার ছিলেন GCPA এর ফাউন্ডার সেক্রেটারী, পরবর্তীতে মহারাজা অনন্ত রায় ও বংশী বদন বর্মন এই অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব নেন। এখন অবশ্য গ্রেটার নেতা বংশী বদন ও অনন্ত রায় আলাদা হয়ে গেছেন কার্যগত ভাবে।

 কিন্তু কথা হল কংগ্রেস সরকারের আমলে মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ নিজেও এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি, কংগ্রেসের অন্যান্য ভুমিপুত্র কোচ রাজবংশী নেতৃবৃন্দও এই নিয়ে ভারত সরকার বা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে দাবী জানান নি।

 বামফ্রন্ট আমলেও শাসক দল বা বিরোধী দলের কোনো ভুমিপুত্র কোচ রাজবংশী নেতার মুখ থেকে এই নিয়ে কোনো কিছু বলতে শোনা যাইনি। অবশ্য কামতা কোচবিহারের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলির কোনো ভুমিপুত্র নেতাই এই নিয়ে মাথা ঘামান নি। প্রায় প্রত্যেকেই রাজনীতিটা নিজের সমাজ বা মাটির উন্নতির জন্য (সরকারী ভাবে যা প্রাপ্য তার অধিক আলাদা ভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যগত দিক থেকে কোনো কিছুই ছিলনা  ) করেন নি বা আলাদা ভাবে দাবী করেন নি।

 যখন কুচবিহারের ইতিহাস মানুষ অল্প অল্প করে জানতে পারল, বন্চনার হিসেব নিকেশ কষা শুরু হল, তখনই দাবী দাওয়া উঠতে থাকল। GCPA এর নারায়ণী রেজিমেন্ট (Central Govt.) এর দাবী অবশ্যই যুক্তিযুক্ত। যদিও বর্তমান ভারত সরকার বছরের পর বছর টালবাহানা করে যাচ্ছে নির্বাচনের আগে গঠন করার অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও। 
অন্যদিকে ইদানিং কালে কিছু ক্ষত্রিয় সমিতি “রাজবংশী ক্ষত্রিয় রেজিমেন্ট” এর দাবী করছে। জলপাইগুড়ির রাজবংশী ক্ষত্রিয় সমিতি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছে। রাজবংশী ক্ষত্রিয় রেজিমেন্ট এর কনসেপ্ট নিয়ে এখন যেটা দাবী তোলা হচ্ছে সেটা আসলে ঠাকুর পন্চানন বর্মার ক্ষত্রিয় আন্দোলনের সময়কালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কিছু রাজবংশী ক্ষত্রিয় যুবক যুদ্ধে সামিল হয়েছিল এবং তাদের কৃতিত্ব সাড়া ফেলে দিয়েছিল। রঙপুরের সংসদ সভায় তৎকালীন সভাসদগণ স্থির করেছিলেন যে ভারত সরকারের কাছে যেন “ক্ষত্রিয় রেজিমেন্ট” গঠনের দাবী জানানো হয়। এতে দুটি উদ্দেশ্য সাধন হবে, প্রথমত ক্ষাত্র শক্তি উদ্বুদ্ধ হবে আর জীবিকার পথও প্রশস্ত হবে। অবিভক্ত গোয়ালপাড়া জেলার ধুবড়ী শহরে ক্ষত্রিয় সমিতির একাদশ অধিবেশনে ঠাকুর পন্চানন বর্মা স্বয়ং “ক্ষত্রিয় রেজিমেন্ট” গঠনের প্রস্তাব করেন। তাঁর ভাষণের অংশবিশেষ তুলে ধরা হল – 

ভাষণে তিনি বলেন-

“ভগবৎ কৃপায় সমাজে প্রকৃত ক্ষাত্রভাব জাগিতেছে। অন্তরস্থিত প্রকৃত ক্ষাত্রভাব চেতনা পাইয়াছে। জাগরণ ফুটিয়া উঠিতেছে। গত ঘাের মহাযুদ্ধকালে নরেশের ডাকে ভবেশের ডাক অন্তরে বুঝিয়া ক্ষত্রিয়গণ স্বধর্ম ভাবিয়া নিজ উৎসাহ ভরে যুদ্ধে চলিয়া গেল। আপনাকে ও সমাজকে ধন্য করিল।

কিন্তু ভগবৎকৃপায় সমুদ্যন এই ভাবটির যদি পুষ্টি সাধিত না হয়, পুনরায় বিলয় হয়, আমাদের ক্ষাত্রভাব বিলােপের দিকে অগ্রসর হইবে, মহৎগুণ উদিত হইয়া পুনরায় লয় পাইতে থাকিবে। চিত্ত তারল্য হেতু সুবুদ্ধিবশীতার স্থলে পরবুদ্ধি পরিচালিতা ভাব প্রভৃতি নানাবিধ অনর্থ সমাজে প্রবেশ করিতে
পারে।

এই অনর্থ নিবারণ জন্য ভগবৎকৃপায় উন্মেষপ্রাপ্ত ক্ষাত্রভাব পরিবর্ধন ও পরিপােষণ জন্য, সমাজের ও দেশের মঙ্গল জন্য ক্ষত্রিয়গণের নিজের একটি সৈন্যদল গঠন করিতে পারিলে উক্ত গুণগুলির পরিবর্ধন ও পরিপােষণ তথা ক্ষত্রিয়গণের ক্ষাত্র প্রতিষ্ঠার উদ্ধার সাধন করা হইবে। তজ্জন্য একটি ক্ষাত্র
সৈন্যদল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিতে হইবে। 

গােয়ালপাড়া জিলাবাসী ক্ষত্রিয়গণ পূৰ্ব্ব হইতে সৈন্যদলে ভুক্ত আছে। অনেকে অনেক স্থলে যুদ্ধ দেখিয়াছে। সুবাদার, সুবাদার মেজর প্রভৃতি উন্নত দেশীয় অফিসার পদে উন্নীত হইয়া দক্ষতার ও সুপ্রশংসার সহিত কার্য করিয়া আসিয়াছে। গত মহাযুদ্ধের সময়ে ধুবড়ী অঞ্চল হইতে বহু ক্ষত্রিয় সৈন্য দলভুক্ত হইয়াছে। শ্রীযুক্ত নগরচাঁদ হাবিলদার মহাশয় সন ১৩২২ সনে ৪০০/৪৫০ ক্ষত্রিয় সৈন্য সংগ্রহ করিয়া লইয়া যায়। ইহারাও সৈন্যদলে পূর্ব প্রবিষ্ট ক্ষত্রিয়গণ ভিন্ন ভিন্ন দলে থাকিয়া ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সালােনিকা, ইজিপ্ট প্রভৃতি দেশে সম্মুখ সংগ্রাম করিয়া ক্ষাত্র স্বধর্ম পালন জন্য কেহ বা প্রাণ, কেহ বা অঙ্গ উৎসর্গ করিয়াছে। গোর্খা, শিখ প্রভৃতি প্রখ্যাত যােদ্ধাগণের সহিত একদলে একসঙ্গে যুদ্ধ করিয়া যুদ্ধ বিষয়ে তাহাদের সহিত তুল্যতা প্রমাণ করিয়াছে। 

রংপুর, দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি অঞ্চল হইতে যে সকল ক্ষত্রিয় বাঙ্গালী সৈন্যদলে গিয়াছে, তাহারাও অন্তরস্থিত ক্ষাত্র স্বভাবের স্ফুরণ মহিমা দ্বারা অধ্যক্ষের প্রিয়তাধিক্য ও প্রশংসা অর্জন করিয়াছে। করাচীর বেঙ্গলী রেজিমেন্টের অধ্যক্ষ পত্রে উল্লেখ করিয়াছেন Men of this Kshatriya community make better soldiers than most of the others অর্থাৎ অন্যান্য জাতির লােক অপেক্ষা ইহারা (ক্ষত্রিয়েরা) দক্ষতর সৈন্য হয়। শিখ, গুর্খা প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন দলভুক্ত ক্ষত্রিয়গণকে একত্র করিলে ইহাদের সংখ্যা নিতান্ত কম হইবে না। আরাে লােকের আবশ্যক হইলে গােয়ালপাড়া, রংপুর, দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি প্রভৃতি জিলা হইতে ও রাজ্য কুচবিহার হইতে ক্ষত্রিয় সৈন্য সংগ্রহ করিয়া রেজিমেন্টের আবশ্যকীয় সংখ্যা পূরণ করা যাইতে পারে। তজ্জন্য উৎসাহও দেখা যায়। ক্ষত্রিয়গণ একত্র থাকিলে আপনভাবে সকলে ভাবিতে পারিবে। আপন দলটির উৎকর্ষে আপনাদের উৎকর্ষ ভাবিয়া দলটির উৎকর্ষ জন্য চেষ্টা এবং অপর দল অপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্ব লাভ জন্য প্রতিযােগিতাভাব জাগিবে। ক্ষত্রিয়গণের ক্ষাত্রোচিত প্রাণ বাড়িবে। আপন স্বধর্ম ভাবনা উজ্জ্বলতর হইতে থাকিবে। ক্ষাত্ৰতেজ স্ফূরণ বাড়িয়া সমাজের তথা দেশের তেজোবলবীর্য বাড়াইয়া দিবে। এজন্য ভারতীয় রাজপ্রতিনিধির নিকট আবেদন নিরূপিত হইয়াছে।” (সূত্র: ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জীবনচরিত, গ্রন্থকার উপেন্দ্রনাথ বর্মন, সম্পাদনা ননীগোপাল রায়

প্রসঙ্গত বলা ভাল যে ১৯৩৫ সালে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা পরলোক গমন করেন, ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়, কোচ রাজবংশী অধ্যুষিত রঙপুর ও দিনাজপুর জেলার অনেকাংশ বাংলাদেশের (পূর্ব পাকিস্তান) সাথে চলে যায়; গোয়ালপাড়া জেলা আসামের সাথে চলে যায়। ১৯৫০ সালে কুচবিহার রাজ্য ভারতের সাথে যুক্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলায় পরিনত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৫০ সাল মানে রাজনৈতিক দল হিসাবে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। একই রকম ভাবে কুচবিহার ও জলপাইগুড়ির কংগ্রেসের রাজবংশী মুখ বলতে ছিলেন শ্রী উপেন্দ্রনাথ বর্মন (দফাদার) মহাশয়। ইনি যেমন কংগ্রেসের নেতা ছিলেন তেমনি ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার ভাবশিষ্যও ছিলেন। সংবিধান রচনার সদস্য কমিটির মধ্যে ইনিও ছিলেন। মাননীয় উপেন্দ্রনাথ বর্মন মহাশয় তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কিন্তু একবারও ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার প্রস্তাবিত “ক্ষত্রিয় রেজিমেন্ট” নিয়ে দাবী তোলেন নি স্বাধীনতা পরবর্তী ভারত সরকার তথা কংগ্রেস সরকারের কাছে। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকার ও দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকার উভয় ক্ষেত্রেই কংগ্রেস দীর্ঘ বৎসর থাকা সত্ত্বেও রাজবংশী ক্ষত্রিয় নেতাগণ কখনও দাবী তোলেন নি। ১৯৯৬-৯৭ সাল নাগাদ GCPA কতৃক কোচ রাজবংশী দের জন্য “নারায়ণী রেজিমেন্ট” গঠনের দাবী তোলার পরেও বিগত বা বর্তমান প্রজন্মের অনেকেরই জানাই ছিলনা যে ক্ষত্রিয় রেজিমেন্ট নামে কোনো রেজিমেন্ট গঠনের দাবী প্রায় ১০০ বছর আগে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কাছে উঠেছিল।

 ভারত স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘকাল পর কোচ রাজবংশী দের জন্য যখন প্রথম “নারায়ণী রেজিমেন্ট” এর দাবী তোলা হয়েছিল বিশাল সংখ্যক ভুমিপুত্র জনগণের বিরামহীন সমর্থনে, আশাকরা যায় বর্তমান ভারত সরকার তা গঠনের জন্য সচেষ্ট হবে যা ১৯৪৯ সালে মিঃ ভি.পি. মেনন মহাশয় তার পত্রে উদ্ধৃত করেছিলেন।

অনন্ত মহারাজের সেনা

ইতিমধ্যে বর্তমান রাজ্য সরকার পুলিশ ডিপার্টমেন্টে নারায়ণী ব্যাটালিয়ান গঠনের প্রস্তাব রেখেছেন। এর সাথে সাথে পাহাড় ও জঙ্গল মহলের জন্যও ব্যাটালিয়ান গঠন করা হবে। এই সব কটি ব্যাটালিয়ান বেঙ্গল পুলিশের আন্ডারেই থাকবে। সাধারণ ভাবে পুলিশের ১০নং ব্যাটালিয়ান বা ১৪নং ব্যাটালিয়ান এইরকম ভাবে নম্বর দিয়ে ব্যাটালিয়ান এর নাম শুনেছি। এইসব নম্বরযুক্ত ব্যাটালিয়ান এর আলাদা কোনো ক্ষমতা বা সুযোগ সুবিধা থাকে তাও নয়। সুতরাং অপেক্ষায় থাকতে হবে কি বিশেষ ক্ষমতা বা সুযোগ সুবিধা দিয়ে নারায়ণী ব্যাটালিয়ান গঠনের প্রস্তাব রাখা হল। আরো যেটি প্রশ্ন থেকে গেল সেটি হল নারায়ণী ব্যাটালিয়ান এ কি শুধুমাত্র কোচ রাজবংশী যুবক নিযুক্ত হবে? নাকি পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো সম্প্রদায়ের যুবক নিযুক্ত হতে পারে? নারায়ণী ব্যাটালিয়ান কি শুধু কুচবিহার জেলার কোচ রাজবংশী যুবকের জন্য নাকি যেকোনো জেলার কোচ রাজবংশী যুবক নিযুক্ত হবে? এখোনো সংশয় থেকেই যাচ্ছে এই ব্যাটালিয়ান এর দ্বারা পশ্চিমবঙ্গের কোচ রাজবংশী যুবক কতটা উপকৃত হবে।

 নারায়ণী ব্যাটালিয়ান সম্পর্কে যখন আলোচনা হল তখন এই ব্যাটালিয়ান কনসেপ্ট নিয়ে কিছু ইতিহাস জেনে রাখি। নাৎসি যুগে অর্থাৎ ১৯৪১-১৯৪৫ সালে জার্মানির যুদ্ধের সময় জার্মান পুলিশ এক বিশেষ ব্যাটালিয়ান তৈরী করেছিল। পুলিশ ব্যাটালিয়ান 309 (Polizeibattalion 309) , এই ছিল তার নাম। জার্মান অকুপায়েড ইউরোপের (তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল) দায়িত্বে এই ব্যাটালিয়ান নিযুক্ত ছিল। ইতিহাসে যে সকল জেনোসাইট বা মনুষ্য হত্যার কথা জানতে পারি তার মধ্যে পুলিশ ব্যাটালিয়ান 309 এর ইহুদি জেনোসাইড (mass murder) অন্যতম যাকে আমরা হলোকাস্ট (Holocaust) নামে জানি। ছয় মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল এই সময় যার বেশীর ভাগটাই ইহুদি সম্প্রদায়ের ছিল। এটাও জেনে রাখা ভাল যে বিজ্ঞানের যত বিষ্ময়কর আবিস্কার হয়েছে তার অনেক ক্ষেত্রেই অবদান ইহুদি সম্প্রদায়ের মানুষ তথা বিজ্ঞানীদের। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনও এই ইহুদি সম্প্রদায়ের। 


# Narayani Regiment, Kochrajbanshi Narayani Sena, Kshatriya Regiment, Thakur Panchanan, Upen Barma, VP Menon, Maharaja Jagadipendra Narayan, Kumar Anil Narayan, Maharaja Ananta Roy, Bongshibadan Barma, Coochbehar State Force, Coochbehar Power House, Debottor Trust Coochbehar, Narayani Batelian, পন্চানন বর্মার ক্ষত্রিয় রেজিমেন্ট, 

আরো পড়ুন –

রায়সাহেব ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার কর্মজীবন সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য

রায়সাহেব পন্চানন বর্মার (সরকার) “ডাংধরী মাও” শীর্ষক কবিতা।

Secret Letter to Sardar Vallabhai Patel/ 1949/ regarding Cooch Behar Merger

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
follow kamatablog