কুচবিহারের রাজকুমারীদের কথা।

কুচবিহারের রাজকুমারীদের কথা।

লিখেছেন: কুমার মৃদুল নারায়ন

কুমার মৃদুল নারায়ন

কুচবিহারের রাজকন্যারা নিছক পর্দার আড়ালে অন্দরমহলেই নিজেদের আবদ্ধ রাখেননি। মহারাজারাও তাদের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মনের বিকাশ ঘটাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তাদের বিয়েও হয়েছিল শিক্ষিত ও সাংস্কৃতিক চেতনাসম্পন্ন পরিবারগুলিতে। তাই তাদের মধ্যে কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোড়ামীর পরিবর্তে উদার মানসিকতা লক্ষ্য করা গেছে।

কুচবিহারের রাজকন্যারা দানশীলতা ,বাগ্মিতা, নিষ্ঠাবান ও সামাজিক চেতনা সম্পন্ন ছিলেন।তারা তাদের পিতা ও ভাইদের মতো প্রজানূরগী ছিলেন।প্রজাদের মধ্যেও তারা অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন । তাদের আন্তরিক ব্যবহারে, সহৃদয়তা,সরলতা ও মহানুভবতায় রাজ্যবাসীর কাছে তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্রী। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য ।কুচবিহার থেকে সুদূর ত্রিপুরা ,জয়পুর তাদের কর্মকাণ্ডের নিদর্শন এখনো উজ্জ্বল ভাবে সমাদৃত । রাজকুমারী আনন্দময়ী ,সুধীরা দেবী , সুকৃতি দেবী ,প্রতিভা দেবী,ইলা দেবী ,মেনকা দেবী, গায়ত্রী দেবী, কুচবিহারের লোকপ্রিয় রাজকন্যারা আজও আমাদের মনের মনিকোঠায় উজ্জল ।

মহারাজকুমারী আনন্দময়ী

মহারাজা নরেন্দ্র নারায়ণ এবং মহারানী নিস্তারিণী দেবীর জ্যেষ্ঠ কন্যা ও মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ন এর বড় বোন কুমারী আনন্দময়ী ১৮৬০খ্রিস্টাব্দের ১৮জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ।তিনি সংস্কারমুক্ত এবং সাংস্কৃতিক ভাবনায় বড় হতে থাকেন । বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় তিনি শিক্ষা লাভ করেন ।ইংলিশ মহিলার অধীনে প্রায় তিন বছর ধরে তিনি ইংরেজি শিক্ষা লাভ করেন ।খুব ভালো বাংলা তিনি লিখতে পারতেন । কাউন্সিল রেকর্ডস অফিসে তার এবং তার দুই ভাইয়ের হাতের লেখার নিদর্শন রক্ষিত আছে । মাত্র আট বছর বয়সে পাঙ্গার রাজকুমার (পরবর্তীকালে রাজা )যোগেন্দ্র নারায়ন এর সঙ্গে ১৮৬৮খ্রিস্টাব্দের ২০জানুয়ারি তার বিবাহ হয় । যৌতুক হিসেবে বাৎসরিক ৬০০০ টাকা দেওয়া হয় ।বিবাহের অল্পদিনের মধ্যেই তিনি বিধবা হন এবং কুচবিহার রাজ্যে সাময়িকভাবে ফিরে আসেন ।কুচবিহার রাজ্যে ফিরে এসে তিনি আদর-যত্নে থাকতেন । ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে পিতামহী মহারানী কামেশ্বরী ডাঙ্গর আই দেবতীর সঙ্গে মহারাজকুমারী বারানসী যান এবং সেখানে জ্বরে আক্রান্ত হলে ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২ডিসেম্বর কুচবিহারের পথে রওনা হন ।অসুস্থতা ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে হুগলির সিভিল সার্জনের অধীনে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।দিনদিন শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে এবং ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

রাজকুমারী মৃত্যুর পূর্বে পাঙ্গার জমিদারী তার বৈমাত্রেয় ভ্রাতা মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ কে উইল এর মাধ্যমে দান করেন । এভাবেই পাঙ্গা স্টেট এর কিছু অংশ কুচবিহার রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ।

মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ন তার স্বর্গীয় প্রিয় দিদির কথা ভুলতে পারেননি । “বাবা কাছুয়া “বা আমার প্রিয় ছোট ভাই ,দিদির আদরের ডাক মহারাজা কোনদিনও ভুলতে পারেননি । তাই মহারাজা দিদি স্মৃতিকে সঠিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে কুচবিহার ধর্মশালা (দরিদ্রদের বিনামূল্যে আহার এবং বসবাসের ব্যবস্থা ) তৈরি করেন এবং মহারাজা ব্যক্তিগতভাবে এই ধর্মশালা উদ্বোধন করে প্রিয় দিদির নামে উৎসর্গ করেন ১৮৯০খ্রিস্টাব্দের ৪মে মাসে ।

মহারাজকুমারী সুকৃতি দেবী

মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ন ও মহারাণী সুনীতি দেবীর জ্যেষ্ঠা কন্যা মহারাজকুমারী সুকৃতি দেবী জন্মগ্রহণ করেন ১৫ জানুয়ারি ১৮৮৪খ্রিস্টাব্দে ।সুকৃতি দেবীর ডাকনাম ছিল “গার্লী”। ১৫ বছর বয়সে সুকৃতি দেবীর বিবাহ হয় কলকাতার উডল্যান্ডসে,বৃহস্পতিবার ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে নভেম্বর সন্ধ্যা ৭ ঘটিকায়। পাত্র মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দিদি স্বর্ণকুমারী এবং জানকীনাথ ঘোষালের আই.সি. এস.(I.C.S) পুত্র জ্যোৎস্নানাথ ঘোষালের সঙ্গে। এই মহাসমারোহে বহু গণ্যমান্য ব্যক্তির শুভাগমন ঘটে। নব দম্পতি এবং তাদের পিতা মাতা সুমধুর ব্যবহারে যেভাবে সমবেত সুধিমন্ডলীকে খুশি করতে পেরেছেন তার জন্য আন্তরিকভাবে সবাই তাদের অভিনন্দন এর হাত প্রসারিত করেছিলেন। উডল্যান্ডস এর প্রবেশ পথের সাজসজ্জা সকলকে মুগ্ধ করেছিল। গ্যাসের আলোয় আলোক ঝলমল নানা বর্ণের আলো বিবাহ আসরকে অভিনব রূপদান করেছিল।অনুষ্ঠান সময়ে ভারতীয় এবং ইউরোপীয় অতিথিদের নিয়ে প্রায় দুই হাজারের মতো অতিথি উপস্থিত ছিলেন ।এই বিবাহ অনুষ্ঠানের পূর্ণ সমাপ্তি ঘটে বর-কনে উভয়পক্ষের আনুষ্ঠানিকভাবে দলিলে স্বাক্ষর দানের পর। লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জন উডবার্ন (Sir John Wood Burn)এবং চীফ্ জজ স‍্যার ফ্রান্সিস ম্যাকলিন(Sir Francis MacLean) দ্বারা উক্ত চুক্তিপত্র প্রত্যয়িত হয়। অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করতে পুরো এক ঘন্টা সময় লেগেছিল।

উপস্থিত অতিথিবৃন্দ বহু মূল্যবান এবং সুন্দর যে সমস্ত উপহার দিয়েছিল সেগুলোকে একদিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়। বিবাহের কেক (Wedding cake) বিশেষ যত্ন সহকারে তৈরি করা হয়েছিল , যার চারিদিক বর-কনের ছবিদ্বারা সুন্দরভাবে সুসজ্জিত ছিল। উচ্চতা ৫ফুটের বেশি আর ওজন ১৪০পাউন্ড এর বেশী।

এই শুভ বিবাহ উপলক্ষে কুচবিহারের সমস্ত কার্যালয় সাত দিন বন্ধ ছিল । কুচবিহার জেলখানা থেকে তিনজন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল । চাকলাজাত জমিদারি মহলের ২৫ হাজার টাকা এবং কুচবিহার রাজ্যে ১২হাজার টাকা রাজস্ব মুকুব করা হয়। বারানসী, দেবীগন্জ ও কুচবিহার রাজ্যের সর্বত্র দরিদ্র গনকে ভিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়।

সুকৃতি দেবীর একজন পুত্র ও একজন কন্যা ছিল, পুত্র অজিতকুমার এবং কন্যা রোমা। সুনীতি দেবী তাঁর আত্মজীবনীতে সুকৃতি শব্দের অর্থ “সৎ কর্ম “বলে উল্লেখ করেছেন।১৯৫৮খ্রিস্টাব্দে সুকৃতি দেবী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।

মহারাজকুমারী প্রতিভা দেবী

মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ন এর দ্বিতীয় কন্যা প্রতিভা দেবী জন্মগ্রহণ করেন ২২নভেম্বর ১৮৯১খ্রিস্টাব্দে। প্রতিভা দেবীর ডাকনাম ছিল প্রীতি। সুনীতি দেবীর তিন কন্যাই একাধিকবার বিদেশে যাওয়ার ফলে তাদের চালচলনে দেশীয় ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশী ভাবনা এবং আধুনিক মনস্কতার প্রকাশ ঘটে। প্রতিভা দেবী ঘোড়ায় চড়তে জানতেন এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে শিকার যাত্রার সঙ্গী হতেন। ১৯১২খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ড নিবাসী জন লিওনেশ মান্ডারের সঙ্গে কলকাতার উডল্যান্ডসে প্রতিভা দেবীর বিবাহ সম্পন্ন হয়।ইংরেজ পুরুষের সঙ্গে রক্ষণশীল কুচবিহার রাজ্যের রাজকুমারীর বিয়ের সংবাদে আলোড়ন পড়ে যায়। এই পরিণয় তৎকালীন সময়ে রক্ষনশীলতার ভাবাবেগকে কুঠারাঘাত করা মনে করা হলেও আধুনিক মনস্কা মহারাজা এবং রাজকুমারীদের উদারনীতি মানসিকতা প্রকাশ করে ।

শুভ পরিণয় এর পর নবদম্পতি ইংল্যান্ডে চলে যান। প্রতিভা দেবী ইংল্যান্ডে বসবাস করলেও মাঝেমধ্যে শিকড়ের টানে কুচবিহারের চলে আসতেন। বিবাহ অনুষ্ঠানের কিছু পূর্বেই মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ন এর প্রায়াণ হওয়ায় মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান অনাড়ম্বর হয়। যদিও তার বৈবাহিক/সাংসারিক জীবন মধুর ছিল না। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুলাই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মহারাজকুমারী সুধীরা দেবী

মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ন এর কনিষ্ঠা কন্যা সুধীরা দেবী জন্ম গ্রহণ করেন১৮৯৪খ্রিস্টাব্দের ৭মার্চ কলকাতার উডল্যান্ডসে।তিনি তার দিদিদের মতো আধুনিকমনস্কা ছিলেন। তিনি ঘোড়ায় চড়তে এবং শিকার যাত্রায় খুব উৎসাহী ছিলেন। পিতা-মাতার সংস্কারমুখী এবং প্রগতিবাদী ভাবনায় পরিপুষ্ট হয়ে আধুনিক ভাবনায় বড় হতে থাকেন। তার ডাকনাম ছিল বেবী। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি হেনরি মান্ডারের সঙ্গী তার শুভ পরিণয় ঘটে কলকাতার উডল্যান্ডসে।এক্ষেত্রে বলে রাখি মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ এর দুই মেয়ের বিবাহ হয় দুই ভাইয়ের সঙ্গে এবং এই বিয়ে সম্পন্ন হয় মহারাজার মৃত্যুর পর। সুধীরা দেবীর তিনজন সন্তানাদি ছিল—–গীতা ,ডেরেক এবং গার্বো।১৯৬৮খ্রিস্টাব্দে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ন এর কনিষ্ঠা কন্যা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মহারাজকুমারী ইলা দেবী

মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ান ও মহারানি ইন্দিরা দেবীর প্রথম কন্যা রাজকুমারী ইলা দেবীর জন্ম কলকাতার উডল্যান্ডসে ১৯১৪খ্রিস্টাব্দের ১লা অক্টোবর । তার শিক্ষার সূচনা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে, এছাড়াও তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। শান্তিনিকেতনে অধ্যায়ন করার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে “মালঞ্চ”গ্রন্থখানি উপহার দিয়েছিলেন। তিনি খুব হাস্যকৌতুক প্রিয় ছিলেন ,স্থানীয় ভাষায় কথা বলতে পারতেন ।ছোটবেলায় রাজবাড়ীতে ভাই-বোনরা মিলে জমিয়ে রাখতেন। তিনি ঘোড়ায় চড়তে খুব ভালোবাসতেন ।

মহারাজকুমারী সামরিক শিক্ষালাভের ফলে প্যারাসুটে নির্ভ়য়ে নামতে পারতেন। মহিলা বিমান চালকের “এ” ক্লাস সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হন। তিনি বিমান চালাতে পারতেন।

১৯৩৬খ্রিস্টাব্দের ১২ই জুন (কুচবিহার গেজেট উল্লিখিত ) ত্রিপুরারাজ রমেন্দ্র কিশোর দেববর্মনের সঙ্গে তার বিবাহ হয় ।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাত্র রমেন্দ্র কিশোর এবং পাত্রী রাজকুমারী ইলাদেবীর এই শুভ পরিণযয়ের দিনে আশীর্বাদ বার্তা পাঠিয়ে ছিলেন তা নিচে তুলে ধরা হলো:-

কল্যাণীয়া শ্রীমতি ইলা,

তোমরা যুগল প্রেমে রচিতেছ যে আশ্রয়খানি
আমি কবি তারপরে দিনু মোর আশীর্বাদ আণি
মিলন সুন্দর হোক, সংসারের বাধা হোক দূর,
জীবনযাত্রার পথ হোক্ শুভ ,হোক অবন্ধুর।।

আশীর্বাদক
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শান্তিনিকেতন ১২ জুন ,১৯৩৬

(গল্পকার শ্রীশোভেন সান্যাল এর মাধ্যমে এ তথ্যটি প্রাপ্ত )

বিয়ের পর ইলা দেবী ত্রিপুরার বিভিন্ন সামাজিক এবং জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ।তিনি সেখানে শিশু এবং মাতৃত্ব মঙ্গল বিষয়ক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি স্বামী, পুত্র-কন্যা সকলকে নিয়ে দেশ-বিদেশ এবং দার্জিলিং-এ একাধিকবার গিয়েছেন।
ইলাদেবীর দুই ছেলে ভীম , ভরত এবং মেয়ের নাম দেবিকা।

ভীমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রিতার । তিনি নিঃসন্তান ছিলেন । ২০০২এর এপ্রিল মাসে দিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ভরতের সঙ্গে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মুনমুন সেনের বিবাহ হয়। তাদের দুই মেয়ে রাইমা এবং রিয়া।

ইলাদেবীর মেয়ে দেবীকার বিয়ে হয়েছিল গায়ত্রী দেবীর সতীনের ছেলে পৃথ্বীরাজ সিংহ (প্যাট) এর সঙ্গে । যদিও তাদের সংসার জীবন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিল । পরবর্তীতে তিনি গায়ত্রী দেবীর ছায়াসঙ্গী ছিলেন এবং কুচবিহারে বহুবার এসেছেন। ১৯৮০এর ডিসেম্বর মাসে ক্যান্সার রোগে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।

১৯১৫-১৬আর্থিক বছরে ইলাদেবীর নামে বাৎসরিক “ইলা পুরস্কারের “ঘোষণা হয় এবং সেজন্য তুফানগঞ্জে বালিকা বিদ্যালয় নিজস্ব ভবন তৈরি করার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়।পরবর্তীতে ১৯১৮খ্রিস্টাব্দে এই পুরোনো বালিকা বিদ্যালয়টি ইলাদেবীর নামে নামাঙ্কিত হয় এবং মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ান এই বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন । স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১৯৬৫খ্রিস্টাব্দে রাজ্য সরকার “ইলা দেবী বালিকা বিদ্যালয়কে “নতুন আঙ্গিকে মাধ্যমিক পরবর্তীতে উচ্চমাধ্যমিক উন্নীত করে সুনামের সঙ্গে গোটা রাজ্য তথা জেলায় পঠন-পাঠন এবং রেজাল্ট এ সাফল্যে লাভ করে চলেছে।

কুচবিহারের রাজকন্যা তথা ত্রিপুরার মহারানী ইলা দেবী মাত্র ৩০বছর বয়সে আগরতলায় দেহত্যাগ করেন ।তার মৃত্যু ছিল রহস্যময় । গায়ত্রী দেবী তার আত্মজীবনীতে (A princess remembers )লিখেছেন , খাদ্যে বিষক্রিয়ায় গুরুতর অসুস্থ হন ইলা দেবী।কিন্তু কুচবিহার দর্পণ, ১৯৪৪ তার হূদরোগে মৃত্যু হয়েছে (২৮/৬/১৯৪৪) বলে জানা যায়।অনেক অনুসন্ধানের পর তার মৃত্যু রহস্যের সমাধান সূত্র পাওয়া যায়নি । কুচবিহার গেজেটে ১৯৪৬, ইলা দেবীর মৃত্যু তারিখ ২৮/৬/১৯৪৫। এভাবেই সর্বদা হাস্যকৌতুক কুচবিহারের রাজকন্যা ইলা দেবীর উজ্জ্বল জীবনদীপ অকালে নিভে যায় ।

কুচবিহারের রাজকন্যারা তাদের জন্মভূমিকে মায়ের মতোই শ্রদ্ধা করতেন এবং ভালোবাসতেন । তারা মাঝে মাঝেই এখানে আসতেন। এখানের উন্নয়নের জন্য চিন্তা করতেন। বরং এখানকার মানুষেরাই তাদের ভুলে গেছেন। এটা তাদের প্রাপ্য ছিল না।

তথ্যসূত্র :- A Princess Remembers, ক্যাম্বেলের চোখে কোচবিহার, রাজ জ্ঞানকোষ, কুচবিহারের রাজকাহিনী।


Rajkumaris of Coochbehar, Ila Devi, Rajkumari Anandamayi, Sudhira Devi, Sukriti Devi, Ila Devi Girls High School Tufanganj, Prativa Devi, Gayatri Devi.