উত্তরবঙ্গে চরমপন্থী আন্দোলনের জন্য কে দায়ী? Extremist movement Northbengal

VSarkar
প্রদীপ রায় চরমপন্থী আন্দোলন

উত্তর বঙ্গের বুকে চরম পন্থী আন্দোলনের জন্য তৎকালীন সরকার অনেকাংশে দায়ী। WB Govt. was more responsible.

Pradip roy
Writer Pradip Roy

উত্তরবঙ্গে (extremist movement in NorthBengal) সশস্ত্র সংগ্রাম কিন্তু একদিনে হঠাৎ করে জন্ম হয়নি। দীর্ঘ অবহেলা, অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা এবং চরম নির্যাতনের ফলেই এখানে জন্ম হয় সশস্ত্র সংগ্রামের, যদিও কখনোই তা কাম্য ছিল না। বলা যায় বাধ্য করেই উত্তর বঙ্গের সহজ সরল যুবকদের ওই রাস্তায় ঠেলে দেয়া হয়েছিলো। উত্তরবঙ্গে চরমপন্থী আন্দোলনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনেকাংশে দায়ী। (WB govt. is more responsible for extremist movement)

নয়ের দশকে শুরু হোওয়া এই চরম পন্থী আন্দোলনের আগে ঘটে যাওয়া গণতান্ত্রিক জাতিসত্তার বিভিন্ন আন্দোলন লক্ষ্য করলেই সহজেই উপলব্ধি করা যায় কিভাবে এবং কেন উত্তর বঙ্গের বুকে সশস্ত্র বিপ্লবের জন্ম হল। মাতৃ ভাষা ও জাতি মাটিকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু গণতান্ত্রিক জাতিসত্তার আন্দোলন সংঘটিত হয় ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকেই যেমন প্রজাহিত সাধনী সভা, উৎজাস, উত্তর খন্ড এবং আকসু। আন্দোলনের চরিত্র ছিলো সবসময়ই শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি কখনোই চরম পন্থা অবলম্বন করতে দেখা যায়নি।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গুন্ডা বাহিনী

কিন্তু বারে বারেই এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গুলোকে একদিকে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে অন্যদিকে ক্ষমতার বলে গুন্ডা বাহিনী দিয়ে অন্যায়ভাবে ও নির্মমভাবে দমন করা হয়েছিল। এটা যেন দূর্বলের উপর সবলের নিদারুণ অত্যাচার সেই কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই গণতান্ত্রিক আন্দোলন গুলোকে কোনোভাবেই মর্যাদা দেয়া হয় নাই।

১৯৪৯ সনের পরে কোচবিহার গ শ্রেণীর রাজ্যকে যখন পশ্চিম বঙ্গের সাথে শুধু মাত্র একটা জেলা হিসেবে যুক্ত করার পরিকল্পনা ও তোরজোড় চলছিলো তখন কোচবিহার গ শ্রেণীর রাজ্যের স্বতন্ত্রকে ও জাতির অস্তিত্বকে ধড়ে রাখতে জন্ম হয়েছিল প্রজাহিত সাধনী সভা এই সভা তথা কোচবিহার বাসী বার বার বলেছিল কোচবিহার ভারতের গ শ্রেণীর কেন্দ্র শাসিত রাজ্য হিসেবেই থাকবে কোনোভাবেই পশ্চিম বঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করা যাবেনা। কিন্তু সেদিন প্রজাহিত সাধনী সভার আন্দোলনকে ভথা কোচবিহার বাসীর মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, একপ্রকার জোড় করে কোচবিহার রাজ্যকে পশ্চিম বঙ্গের সঙ্গে শুধু মাত্র একটি জেলা হিসেবে যুক্ত করা হয়। কোচবিহার তথা কামতাপুর বাসী তাদের স্বাধীণ সত্ত্বা হারিয়ে বাংলায় মিশে যায়। এটাকে অবহেলা, অবজ্ঞা আর অপমান ছাড়া আর কিই বা বলা যায়?

উৎজাস আন্দোলন / Utjas Movement

এরপর ছয়ের দশকের পর শুরু হয় উৎজাস আন্দোলন জাতি ও মাটিকে উদ্ধার করতে। এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকেও ক্ষমতাসীন সরকারের প্রশাসণ দিয়ে ও শোষক শ্রেণীর লাল চোখ দেখিয়ে আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করা হয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে কোনো পাত্তাই দেওয়া হয় নাই। সেই সময় উৎজাস নেতা যুগোল কিশোর রায় বীরের নেতৃত্বে আলিপুর দুয়ার শহড়ে একটি মিছিলের ডাক দেওয়া হয়।নারী পুরুষ নির্বিশেষে বহু মানুষ মিছিলে অংশ গ্রহণ করে। কিন্তু সেই শান্তি পূর্ণ গণতান্ত্রিক মিছিলের উপর বর্বর ও নির্মম আক্রমণ চালায় গুন্ডা বাহিনী। লাঠি সঠা দিয়ে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়।ঢিল,পাথর ছুড়া হয়। মিছিলে অংশ গ্রহণকারী মা ও বোনদের ইজ্জত নস্ট করা হয়। একজন মহিলাকে ইলেকট্রিক পোস্টের সঙ্গে গলায় শাড়ি পেঁচানো মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।আজো দুই জন মহিলার কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি। সেদিন কি অপরাধ করেছিল সহজ সরল মানুষরা? গণতান্ত্রিক উপায়ে নিজের অধিকার চেয়ে জাতিসত্তার আন্দোলনে মিছিল বের করেছিল বলে? তাদের মৌলিক অধিকারের দাবীতে সরব হয়েছিল বলে? তারা নিজেদের হকের দাবী করেছিলো বলে? এর উত্তর কে বা কারা দেবে? সর্বপরি গণতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে তাদের প্রতি অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন করে উৎজাস আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়।

উত্তর খন্ড আন্দোলন / Uttar Khanda Movement

জাতিসত্তার আন্দোলন কখনোই থেমে থাকেনা তাই সাতের দশকে শুরু হয় উত্তর খন্ড দল বা উত্তর খন্ড আন্দোলন। আন্দোলনের চরিত্র ও নীতি ছিলো সংবিধাণ সিদ্ধ শান্তি পূর্ণ ও গণতান্ত্রিক।বলা যায় উত্তর বঙ্গের সহজ সরল কামতাপুরী জনগণ বরা বর ছিলো গণতন্ত্র প্রেমী ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। কোন সময়েই গণতন্ত্রের বিপক্ষে যায় নাই। কিন্তু ওই গণতান্ত্রিক উত্তর খন্ড আন্দোলনকেও সরকার ভালো চোখে দেখেনি কোনো দিন।

এই আন্দোলন গোটা উত্তর বঙ্গ জুড়ে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে, চারদিকে বিরাট আন্দোলন দানা বাঁধে। সরকার রাজনৈতিক মোকাবিলার পরিবর্তে আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্যাপক অত্যাচার, নির্যাতন ও আক্রমণ চালায়। রাতের অন্ধকারে ক্ষমতাসীন সরকারের নেতা ও গুন্ডা বাহিনী বেছে বেছে আন্দোলনকারীদের ওপর শারিরীক আক্রমণ ও নির্যাতন চালায় ভয় ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়। পুলিশ সবসময়ই ঠুটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করেছিল। থানায় অভিযোগ করে কোনো লাভ হয়নি। উল্টে ভয় ভীতি এমনকি হুমকি প্রদর্শন করা হয়েছিল অভিযোগকারীকে, আন্দোলন ছাড়তে চাপ দেয়া হয়েছিলো। গণতান্ত্রিক অধিকারের কোনো বালাই ছিল না। আজও বহু ঘরে ঘরে আন্দোলনকারীদের মুখে মুখে সেই সময়ের ওই নির্মম আক্রমণ ও নির্যাতনের কাহিনী অভিশপ্ত ইতিহাস হয়ে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। আলতা গেরাম রেল রোকো আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে জগদীশ ও গজেন রায় শহীদ হয়। কিন্তু সরকার কখনোই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রয়োজন মনে করেনি।

উত্তর বঙ্গের সহজ সরল মানুষরা সবসময়ই ছিল প্রতিবাদি ও ন্যায়বাদী সেটা প্রমাণিত হয় ভারত স্বাধীণতা লাভ এর পর বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের গড়ে তোলা আন্দোলন লক্ষ্য করলেই।

আকসু ও কামতাপুর পিপলস পার্টি / AKSU and Kamtapur Peoples Party

নয়ের দশকের গোড়ার দিকে শুরু হয় আকসু আন্দোলন ও পরে কেপিপি আন্দোলনের নীতি ও চরিত্র ছিলো অহিংস তথা ওই পূর্বের ন্যায় গান্ধী বাদী গণতান্ত্রিক। গোটা উত্তর বঙ্গ জুড়ে কামতাপুরী আঈ ভাষার স্বীকৃতির দাবীতে আকসুর ব্যানারে অসংখ্য হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী সামিল হয়। কিন্তু এই আকসুর আন্দোলনকেও তৎকালীন সরকার আদা জল খেয়ে দমন করতে তৎপর হয়ে ওঠে। কোনোভাবেই সভা, মিছিল করার অণুমতি দেওয়া হয় নাই। একপ্রকার অণুমতি ছাড়াই ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা সভা মিছিল করতে বাধ্য হয়। প্রশাসন ব্যাপক অত্যাচার, নির্যাতন ও ধড়পাকড় চালায়।

পুলিশের অত্যাচার ও কামতাপুর আন্দোলন

গোটা উত্তর বঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন জেলে বহু আকসু আন্দোলনকারীদের দীর্ঘদিন ধরে কারা বন্দী করে রাখা হয়। বহু মিছিলে আক্রমণ চালানো হয়। আকসুর ডাকা বন্দে পুলিশ গুলি চালালে শ্যাম সুন্দর দাস ও কান্দুরা দাস শহীদ হয়। আন্দোলনকারীদের বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাস্তায় ঘাটে আক্রমণ চালানো হয়। আরো অনেক ঘটনা আছে।

কাজে উত্তর বঙ্গের বুকে যে একটা উত্তাল চরম পন্থী আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল তার জন্য কিন্তু শুধু উত্তর বঙ্গের মানুষরাই দায়ী নয় তৎকালীন সরকারও অনেকাংশে দায়ী।

# AKSU, # KPP, # Jugal Kishore Roy, # Utjas, Kamtapuri Ai Bhasha,