রায়সাহেব পন্চানন বর্মার ডাংধরী মাও কবিতা। Dangdhori Mao.

Panchanan barma

রায়সাহেব পন্চানন বর্মার (সরকার) "ডাংধরী মাও" কবিতা

রায়সাহেব ঠাকুর পন্চানন বর্মার কামতাবেহারী তথা কামতাপুরী ভাষাত ল্যাখা কবিতা এখান কোচ রাজবংশী মানষিলাক সচেতন করিবার জন্যে, সক্রিয় করিবার জন্যে।

ডাংধরী মাও

চমকি উঠিল্ ডুকরুন শুনি ডাংধরী মাের মাও

দিশা দুয়াের নাই, খালি কোল্লহার, দ্যাখে সংসারের ভাও।। 

বাপ ভাই এর ঘর, সােয়ামির কোলা আর যেইটে নারী থাকে।

জোর করিয়া নুচ্ছা গুন্ডা নিয়া যাইতেছে তাকে।

বেড়া ভাঙ্গিয়া, সােয়ামীক মারিয়া, বােন ঝিউওক ধাক্কে থুইয়া।

পই ধরে নারী, তাকো ভাঙ্গি নিগায়, মুখত কাপড় দিয়া।।

হিয়া ফাটা তার আতরান উঠে সেওনা কাপড় ছেদি।

ডুকরুন তার তেও শুনা যায় আকাশ বাতাস ভেদি।। 

বেটা ছাওয়া গুলা জড়াে হঞা, খালি, ফ্যাল ফ্যাল করি চায়।

ডাংধরী মাও কোর্দ্ধে হাকিয়া, গাইন ধরিয়া ধায়।। 


ডাংধরী মাও (ক্ষত্রিয়ের প্রতি)

আয় আয় রে ক্ষত্রিয়গুলা; তােমাক ডাকো বারং বার।

তােমার কান নাই কি, অন্তর নাই কি, কান্দন শুনিবার?

হউক না ক্যানে দূর দূরান্তর, পর্বত নদী মাঝে।

ক্ষত্রিয় যদি ঠিক হইস্ তুঞি, তেঞো শুনবু কাছে।। 

আতুরা কান্দন, ক্ষত্রিয় কানে, আপনে আসি নাগে।

হিদ্দে উঠে হুড়কা তুফান, শরীরে শক্তি জাগে।। 

তিলেক দেরী আর সয়না, বেগি হয় রে খাড়া।

অস্তর না পায়, বাহা ধরি ধায়, চউখে আগুনের ধারা।

কোর্দ্ধ দেখি দুষ্টা দুষমন, পথ ছাড়ি দেয় আগে।

থাউক পরি তাের নুচ্ছা গুন্ডা, দৈত্য দানব ভাগে।। 

পাও-এর ভরে পাহাড় ভাঙ্গে, ফিরিয়া না চায় বীর।

দুষ্টাক মারি, আর্ত্তক তারি, তবে হয় সে থির।

হিন্দু মুসলমান বিচার নাইরে, মানুষ জন্তু তাে নয় ভিন্।

উলসি ধায়া আর্ত্তক উদ্ধার, এই ক্ষত্রিয়ের চিন্।। 

বিপদ ঝঞ্জা যত – এ আইসে তত-এ উলসে চিত।

আপন বলে বিপদ দমায় আর গায় ইষ্টের গীত।

ক্ষত্রিয় কহলাইস পৈতাও ঝুলাইস, বড় বড় তাের কথা।

ঠিক হয় শুন্ বুঝিয়া দেখি, তুঞি কিরে ক্ষত্রিয় বেটা?

তুই কিরে ক্ষত্রিয়ের বেটা, তারে বীজের ধারা।

তারে নউ কি বয় শিরায় তাের, তারে তেজোতে ভরা?

তুই কিরে সেই ক্ষত্রিয়ের বেটা, যার হিয়ায় অটুট বল,

তারে ভাব কি বুক ভরি তাের নাচায় দেহার কল?

তুই কিরে সেই ক্ষত্রিয়ের বেটা, যার রক্ষা ধরমের ভাও।

আর্ত্তক দেখি আর চিন্তা নাই, চেতিয়া উঠে গাও?

তুই কিরে সেই ক্ষত্রিয়ের বেটা, তেজ উছলি পড়া।

না পায় অস্তর বাহা ধরি ধায় পাথর করে গুড়া?

তুই কিরে সেই ক্ষত্রিয়ের বেটা, তুঞি কিরে সেই বীর।

দুষ্টাক মারি আর্ত্তক তারি তবে যে হয় থির?

তুই কিরে সেই ক্ষত্রিয়ের বেটা, সাহস উদ্যমে ভরা।

যুদ্ধের কথায় ঝাপ্পি আগায়, শত্রুক ভাবি মরা?

তােমাক দেখাে কেনে মরার মতন, জিউ নাই জন ঘটে।

ক্ষত্রিয় ভাবের কথা শুনিয়াও জিউ চেতি না উঠে।

কেনে রে তােমরা উদাস মনে ইত্তি উত্তি চাও।

ক্ষত্রিয় ভাবের কথা শুনিয়াও কশ কশায় না গাঁও?

কেনে রে তােমরা মাঞ্জি মরা রস পাও নাই কি মূলে।

বাপ মাও কি তেজ যােগায় নাই, ক্ষত্রিয় নােঞায় কুলে?

কেনে রে তােমরা শেলশেলা পড়া, তেজে দেহা নয় ভরা।

তিরি লােকের পর জুলুম শুনিলে গর্জি না হও খাঁড়া।

শুন পত্তিরাণ ঐ যে নারীকে নিয়া যাইতছে আগে।

যাক দেখিলে ক্ষত্রিয় প্রাণে বারুদে আগুন লাগে।। 

তেঞো কেনে তাের কোর্দ্ধ জ্বলে না, ফর্কি উঠে না গাও।

ক্ষত্রিয় তেজে জন্ম নােঞায়, ক্ষত্রিয় নােঞ্ায় তাের মাও।

ক্ষত্রিয় কওলাইস, ক্ষত্রিয় নেঞাইস্, নাই ক্ষত্রিয়ের কাম।

ক্ষত্রিয় রক্ত নাই শরীরে তাের, ছাড় ক্ষত্রিয় নাম।। 

ক্ষত্রিয় নামটা শক্তি সমুদয় ভগবানও যাক চায়।

সেই নামের এই দশা দেখিয়া হিয়া ফাটিয়া যায়।

ক্ষত্রিয় না হঞ শেলশেলা পড়া, তেজে দেহ তার ভরা।

তিরি লােকের পর জুলুম শুনিলে গর্জ্জিয়া হয় খাঁড়া।

জিলা রংপুর, থানা মিঠাপুকুর, ভগবতীপুর গাঁও।

ধন্য বুকেরপাটা, ক্ষত্রিয় বেটা, কুড়ানু তার নাও॥

পাটা নেলায় আপন ধিয়নে, কুড়ানু আপন ক্ষেতে।

আওজা পড়িল কানত ‘বাপরে, আগাওরে রাখাে মােকে।’ 

চমকি উঠিল বীর কুড়ানু কোর্দ্ধে ছাড়িল হাক্।

কোন শালারে? থাকিস খানেক, কি কইস মাের মাক্?

ধায় মুনসী পরাণ ফাটি শিষ্য পাড়ার মুখে।

মুরসিদ্ কান্দে শুনি সাকরেদ ঝুকিল ঝাকে ঝাকে।

পাটানেলা তাত, কোর্দ্ধে কুড়ানু, ঘারে ধরিল তাকে ॥

হাড়ভাঙ্গ মাইর মারিল কুড়ানু, কার বাপে আর রাখে।। 

ঠস্ নাগি গেইল শিষ্যগুলাক্, দেখিল পাপের ফল।

দিশা না পায় আর মনে মনে ভাবে, ‘উঃ এইটার কি বল’ ।। 

কোর্দ্ধে আইসে সখা কিনারাম কুড়ানুর পাছে পাছে।

তাকো না জানে বীর কুড়ানু কাম সারিল নিজে।

ধন্য কুড়ানু তুঞি যে ক্ষত্রিয়! ধন্য তাের বাপ মাও।

নিজ্জ মন্ত্র ঠিক ভবানী পূজিলু, হাসে ধরতী মাও।।


“বেটা ছাওয়ার প্রতি” ডাংধরি মাও

‘ছিকো ছিকো’ রে মরা বেটা ছাওয়া ধিক ধিক তােরে ধিক।

মাও বইনােক তাের নুচ্ছা নিগায়, তেঁও থাকিস তুঞি ঠিক?

মরদ মরদ কওলাইস খালি, কেমন তাের মর্দানী?

পাথার বাড়ী হাতে আসি, খালি মাইঞার আগত কেরদানী?

লাজ নাই তাের, হিয়াও নাই তাের, বল নাই তাের ধরে।

এই বাদে তােক টেপাে বউ, ছিকো ছিকো করে।। 

পাটানি পিন্দা বেটা ছাওয়া টেপাে বউ, তােকে কইছে,

ভুল করিয়া টেপাে বউ তােক বেটা ছাওয়া মানিছে?

এইতাে হামেরা বেটী ছাওয়া, হামারাে হিয়াও ভাল।

আসুক নুচ্ছা ন্যারের বেটা, গাইনদি তুলিম ছাল।। 

ধরম রাখিমাে করম রাখিমাে, রাখিমাে বাপ ভাইর মান।

আপন কুলের গৌরব রাখিমাে কাটিমাে নুচ্ছার কান।। 

দাও আছে তাের, কুড়াল আছে তাের, হাতে আছে তাের নাটী।

বাটি কাটা হােলােঙ্গোচ আছে, গরু চড়া পেনটী।।

শালের শিড়ি বাহা দুইখান শিলহেন বুক পাটা

তেঁও তাের মাও বইনােক নিগায়, নুচ্ছা গুন্ডা বেটা।

শুনিশ না কি, কান্দে মাও তাের, মারি হাপরাণ

নুচ্ছা গুণ্ডায় নিয়া যায় মােক তাের কিরে নাই কান?

হাত কি রে তাের কুড়িয়া নাগা, তুই কিরে চাকুলা?

বুকের ভিতর হিয়া নাই তাের, খালি খেড়ের পালা?

জুল জুল করি চায়া আছিস, যেন মােমের পুতুলা?

থর থর করি কাপির নাগছিস, যেন গহিলি ওলা!

কেমন করি তুই আছিস ঠিক, নাই কিরে বুকের পাটা?

মাও বইনক তাের পরে হরে, তুই কিরে নটীর বেটা?

উয়ায় কিরে তাের জননী নােঞায়, নােঞায় আপন বইন?

ছিকো ছিকো রে, তাের মাও কি তােক নাই দেয় গিয়ান!

ইঞায় জন্মিছে ইহার পেটত, উঞায় উমার পেটত ধরা?

জননী মানে নারী সব্বাঞে, তুই কিরে ভুঞি ফোঁড়া?

জনম কিরে তাের ছাগলের পেটত, নাই মাও বইন ভাও?

মাও বইনক তাের পরে হরে, কোরদ্ধে জ্বলে না গাও?

খালি মােকদ্দমায় দুষ্টাদমনে, ফিরেনা ধরম মান।

ভাঙ্গি নুচ্ছার হাড়; মাও বইনক রক্ষা, বাপের বেটার কাম।। 

মাও বইনক যদি রাখির না পারিস আপন বাহাবলে।

খালি পাপের বােঝা বইছিল মাও তার, এই দশা তার ফলে।। 

মর মর তুই এলায় মর, নরকেও নাই তাের থান,

মাও ধরতীর বােঝা কমুক, জুড়াউক সতী মার পরাণ।। 


# Raisaheb Panchanan Barma # Daangdhori Mao # Patani # Pentir daang

# Kamtapuri Bhasha # Koch Rajbanshi # Kshatriya

follow kamatablog