দশভুজা চণ্ডীর প্রতি কান্তেশ্বরের স্তুতি /গোসানী মঙ্গল

কামতাপুরী সাহিত্য – গোসানী মঙ্গল

[ তৃতীয় লহরী ]

দুই প্রহর রাত্রি হইল অঙ্গনা ভাবিয়া।
পূর্ব বিবরণ কহে পুত্র কোলে নিঞা॥
শুন বাপু কান্তনাথ চণ্ডী দিছে বর
জামবাড়ী নগরে তুমি হইয়া নৃপবর। ১০৮
আপন অদৃষ্ট দুখ না হয় খণ্ডন।
আর চণ্ডীর বর বাপু ফলে কদাচন ॥
মায়ে পুতে নিদ্রা গেল তৃতীয়া প্রহরে।
চণ্ডী স্বপন করে বসিয়া শিয়রে। ১০৯
শুন শুন কান্তনাথ না ভাবিহ দুখ।
অবশ্য হইয়া রাজা ভন্জিবেন সুখ।। 
উত্তর মুখে প্রাতে উঠি করহ গমন।
কাজলী কুড়ায় তুমি কর গিয়া স্নান।। ১১০
স্নান করি পূর্বব মুখে জলেতে দেখিবা ।
তাহাতে আমার মূর্তি দরশন পাবা।।
ভয় নাআ করিহ তুমি তাহাকে দেখিয়া।
তাহাকে ধরিয়া তুমি আমাকে ভাবিয়া॥ ১১১
জল মধ্যে উঠিবে মগর ভয়ঙ্কর।
তাহাকে ধরিবা তুমি নাই কোন ডর॥
মগর ধরিলে বংশ রবে চিরকাল।
কুম্ভীর দেখিবা পরে দুই চক্ষু লাল।। ১১২
ভয়ঙ্কর রূপ হয় কুম্ভীর মহাবল।
মগর সমান সেই বলেতে প্রবল।।
ধরিবা তাহাকে তুমি নাহি কোন ভয়।
মোর বাক্য কদাচিত ব্যর্থ নাই হয় ॥ ১১৩
ভয় করিয়া মগরক ধরিতে না পার।
চন্ডীক স্মরণ করি কুম্ভীরক ধর।
কুম্ভীর ধরিলে বংশ বাড়িবে অপার।
দেখিবা তাহার পরে সর্প ভয়ঙ্কর ॥ ১১৪
সর্পক ধরিবা যদি নির্ব্বংশ হইবা।
এই তিন রূপ কথা নিছক জানিবা।।
স্বপন কহিয়া চণ্ডী কৈলাসত গেল।
চেতন পাইয়া কান্ত প্রভাতে উঠিল॥ ১১৫
স্বপনের কথা মনে ভাবিয়া বিস্ময়। 
স্নানহেতু কান্তনাথ ধীরে ধীরে যায়।। 
কাজলী কুড়ায় গিয়া করিলেন স্নান
জল মধ্যে মগর হইলাে দরশন । ১১৬
ভাসিয়া উঠিল মগর জলে ঢাকা গেল।
ভয় পায়া কান্তনাথ তাহা না ধরিল ॥
ঈষৎ হাসিয়া মগর হইল অন্তর্ধ্যান
কুম্ভীর ভাসিল দুই রক্ত লােচন।। ১১৭
কুম্ভীর দেখিয়া মনে ভাবে কান্তনাথ
কি মতে ধরিব ইহা মরণ সাক্ষাত।। 
মনরথ বুঝি কুম্তীর জলতল হইল
ভয়ঙ্কর ফণী ধরি সর্প ভাসিল ।। ১১৮
মনে ভাবে কান্তনাথ সর্পক ধরিব।
চণ্ডী প্রসন্ন কি বা সে প্রাণ ত্যেজিব।। 
জল তল হয় সর্প দেখে কান্তনাথ।
মরণ করিল সার ধরিল ফিচাত ॥ ১১৯
হাসিয়া কহিল দূর্গা সর্প রূপ ছাড়ি।
নির্ব্বংশের কর্মা কেন কৈলা ভ্রম করি।। 
মগর কুম্ভীর ছাড়ি ধর সর্প বর।
য়েক পুরুষ তুমি হইবা নূপবর ॥ ১২০

[ দশভুজা চণ্ডীর প্রতি কান্তেশ্বরের স্তুতি ]

দশভুজা রূপে চণ্ডি দিল দরশন।
নমস্কার করি কান্ত বন্দিল চরণ ।। 
চণ্ডী কহে শুন কান্ত না করিহ ভয়।
প্রভাতে হইবা রাজা জানিবা নিচ্ছয়।। ১২১
কান্তনাথ কহে মা শুনগাে ভবানী।
তােমার প্রসাদে যদি রাজা ধ্যানী।
যুগল চরণ মা করি নিরক্ষণ
বিল্ব্য পত্র দিয়া মা করিব পূজন।। ১২২
নমঃ মাতা মুন্ডমালী ভৈরব ভবানী।
ঢণ্ড মুণ্ড নমঃ মা নম শূলপাণি ।। 
নম মাতা বৈষ্ণবী জগত জননী। 
নমঃ নমঃ দূর্গা মাতা দুর্গতি নাশিনী।। ১২৩
নম মাতা খর্গধারী নমঃ কালিকা।
নম কাত্যায়নী দেবী বাম আসিকা।।
নম নারায়ণী চন্ডী জগত পালন।
তোমার করিয়া পূজা রক্ষ দেবগণ।। ১২৪
নম নম নম মাতা নম নারায়ণী 
নম উগ্রকালী মা দুক্ষনাশিনী।।
বর দেহ সহামায়া জগত আধার।
তোমার যশগুণ ঘুষিবেক সংসার ।। ১২৫
য়েই মতে নানা স্তুতি করে কান্তনাথ ।
গলায় বসন বান্দি পদে দিয়া হাত।। 
প্রসন্ন হইল চন্ডী দিল বরদান
নমস্কার করে কান্ত ধরিয়া চরণ ॥ ১২৬
আশীর্ব্বাদ দিয়া চন্ডী হৈল অন্তধ্যান।
ধীরে ধীরে কান্তনাথ গৃহে আগমন।। 
গৃহেতে আসিয়া কান্ত চন্ডী পূজা কৈল ।
বেল পাত শ্রীফলে পুষ্পাঞ্জলি দিল ।। ১২৭
পূজা বিষর্জিয়া কান্ত নির্মাল্য লইল ।
দুই হাতে ভক্তি করি মস্তকত দিল।। 
ব্রাহ্মণের ঘরে গিয়া গো ধেনু চড়ায়
সন্ধ্যা সময় আইল আপন আলয়।। ১২৮
ভােজন করিয়া পরে কান্ত নিদ্রা গেল।
সেই মতে অঙ্গনাও নিদ্রায় রহিল।। 
চণ্ডী জানিল কান্ত করিল শয়ন।
বিচার করিল চণ্ডী করিব রাজন ।। ১২৯
গােসানীর বরে রাজা হবে কান্তনাথ।
পতিত পাবনী চণ্ডী জানিবা সাক্ষাত।। 
পূজহে ভবানী মায়ের চরণ যুগল ।
ভনে কবি রাধাকৃষ্ণ গােসনী মঙ্গল ॥ ১৩০

(ক্রমশ…… Please follow this website)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *