কোচ-রাজবংশী-কামতাপুরী বিদ্বেষী বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা – পীযূষ সরকার।

কোচ-রাজবংশী-কামতাপুরী বিদ্বেষী বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা –

লেখক: পীযূষ সরকার

১. আমি যাদের নিয়ে কথা বলেছি, বা ভবিষ্যতে বলবো বহুবিধ ব্যবচ্ছেদ এর পরেই বলেছি। নগ্নকে পুনরায় নগ্ন করে কোনও বিকৃত আনন্দ লাভ বা ঋণাত্মক শিল্পনৈপুণ্য দেখানোও আমার কাজ নয়। সেই কাজ যদি করতাম তাহলে বহুজনের চৌর্যবৃত্তি, ধরা পড়া, হাত-পা ধরে কান্নার ইতিহাস, তৈলমর্দন, পিছনে ছুরিকাঘাত করার কৌশল, প্রতিষ্ঠানের ঘরে ধরা পড়া বৃহৎ ‘ব্যক্তিত্বের’ পদলেহন, মঞ্চে সামান্য চেয়ার বা সম্বর্ধনার লোভে কান্নাকাটি, পয়সা খরচ, মাছ-মাংস-ডিম খরচ, কমবয়সী ও মূর্খ অনুগামীদের নিয়ে দল গঠন, কানার দেশে ফলি পড়া রাজাদের যদি তুলে ধরা যায় তো রাতারাতি হাহাকার শুরু হবে । কিন্তু আমি কোচবিহার, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, ইসলামপুর, আলিপুরদুয়ার সহ উত্তর ও দক্ষিণের বহু নিভৃত সৎ লেখক ও মানুষ কেও চিনি ও মানি । কিন্তু সর্বোপরি আমার কাজ আমাকে সম্মান করা। ঠিক পড়েছেন আমাকেই। কারণ আমি যেমন ‘এক’ আমি তেমনই ‘বহু’ , আমি যেমন একক ,আমি তেমনই গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী কবিতাবিলাসী মদখোর বা লাস্যময়ী কোনো লবি নয়, এই গোষ্ঠী একটি স্বতন্ত্র বিশেষ ডমিনেন্ট ‘জিন’ওয়ালা’ জনজাতির (কোচ-রাজবংশী), ইতিহাসের, একটি স্বতন্ত্র ভাষার, সংস্কৃতির।

২. আপনি উড়ে এসে জুড়ে বসে হঠাৎ কোথাও ধ্বনিবিজ্ঞান, ছাঁচ ,ষত্ববিধান, imagined grammatical rule ফলিয়ে কোনো স্বতন্ত্র লোক উচ্চারণ, বানান, সাংস্কৃতিক ধারাকে ‘অভিজাত’ বা ‘কুলীন’ বানাতে আসবেন না। ভুলে যাবেন না গ্রামারের আগে ভাষা , ভাষার আগেও ওই ভাষার মানুষ। অনেক আদিজনজাতি পাখির মতো আওয়াজ করে ; গাছের মতো, ফুলের মতো ইঙ্গিত দিয়ে এখনও কিছু কিছু ভাব প্রকাশ করেন …করতে দিন … Let the language be followed by grammar ! (এই ক্ষেত্রে)। মাষ কলাই আর ঠাকুরি কালাই মিশিয়ে অন্য ডাল বানানোর অনুমতি কেউ আপনাদের দেয় নি। গবেষণা করতে হয় শ্রদ্ধা ভক্তি সহ Native এবং ওই ভাষায় কথা বলা মৌলিক মানুষ কী বলেন মন দিয়ে শুনে অনুকরণ করুন, ভাওয়াইয়া নিয়ে গবেষণা করলে সিঙ্গেল কোটেশন দিয়ে ‘দোতোরা’ বা ‘দোতরা‘ লিখুন ,’দোতারা’ নয় ,খাঁটি হবে গবেষণা। কারণ এই বিষয়ে পৃথিবীর যেকোনো indigenous জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ‘বিশেষ ক্ষমতা’ আছে , সমস্ত নিয়মের উর্ধ্বেও তাঁদের কিছু নিজস্ব নাচের শৈলী আছে, মুদ্রা আছে; গানের সুর, ভাঙন ; হাঁটাচলা ও বলার ভঙ্গি আছে । তার hyper-correction করার অধিকার আপনার নেই , অধিকার ছিনিয়ে নিলে তা কেউ গ্রহণ করবে না বরং বহিস্কার করবে , এমনকি তাঁদের বিশেষ আইনে শাস্তিও পেতে পারেন !

৩. কবি সুজিত দাস সহ যাঁরা এই বিষয়ে প্রতিবাদ করেছেন, করেন , আমি বা আমরা কেউই তাঁদের ‘দল’-এর লোক নই ,সেও আমাদের গোলাম নয় বরং আত্মিক মিল ও শ্রদ্ধা ও মর্মবেদনা এক বলেই হয়তো এটা সম্ভব হয়েছে, হয় । সুজিত বাবুরা হয়তো বাঙালি হয়েও বাঙালির গদ্দারি অনুভব করেছেন কোথাও , মর্মাহত হয়েছেন । আসলে গদ্দারের তো কোনও আলাদা জাত, ভাষা, কাস্ট আলাদা হয় না । সবাই এক । এরাই যেকোনো ভাষার জাতির শত্রু ,এঁদের জন্য বাকিরা ভোগেন । সম্পর্ক নষ্ট হয় । ময়ূখ ব্যানার্জি, রঞ্জন ঘোষাল, অসীম সরকার সহ আরও বহুজন যখন এই কোচ-রাজবংশী জনজাতির ইতিহাস, ভাষা, পোষাক, খাদ্যাভ্যাস নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কথা বলেছেন, রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছেন ; যমুনা বর্মণের মৃত্যু, জবা বর্মণের ধর্ষণ …. আপনাদের চোখ কান খোলা ছিল Kiriti Sengupta, Debashis Dash সহ অন্য বাবু ও ম্যামেরা ? একলাইন লিখেছেন প্রতিবাদ ? এফ.আই.আর ? নাকি ওটা আপনার বিষয় নয়? এক্তিয়ারের বাইরে? নাকি সেই সহাস্য সমর্থন ছিল আপনাদেরও?

 যখন কোনও বিষয়ে থাকতে চান, নাক গলাতে চান পুরোপুরি গলাবেন । ভেতরে ঢুকবেন। শুধু ধ্বনিবিজ্ঞান আর বানানভেদ নিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি ও ডেটা কালেকশনের চেষ্টা করবেন না । কারণ আমি জানি এসব ব্যপারে কোথাও কোনো হেমব্রম, কোনো মাহাতো, কোনো লাকরা, কোনো রাভা, কোনো বর্মণ, কোনো রায়, কোনো বসুমাতারি, বা এই সরকারকেই দিতে হবে আওয়াজ ! লিখতে হবে । এইসব লেখা কোনও খিল্লি করার বা বিকৃত আনন্দ লাভের নয়। আত্মরক্ষার লেখা। আত্মসম্মান ছিনিয়ে নেওয়ার । আপনার বোঝার বয়স হয়নি । এইসব বিষয়ে ওই ‘অভাগী’-র মতো আমরাও বিষন্ন অভিজ্ঞতার সিনিয়র ! অধ্যাপক বিশ্বজিৎ রায়ও ঠিকই বলেছেন – “পীযূষের এই কলম ওর একার নয়, সবার । হাজার পীযূষ দাঁড়িয়ে আছে ওর পিছনে “। আছেই তো । এটা তাই বড় দায় আমাদের।

৪. আমি সবার সাথে মিশি । মিশতে হয় । পড়ি প্রতিটা মানুষ বই । বিভিন্ন তীক্ষ্ণ আলোর অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখি সুচতুর লোকজন । কিন্তু চোখ নেই এদের । চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেন না । ছটফট করেন শুধু । কবিতা পাঠে কখন ডাকবে সেই অপেক্ষা করেন । পাঠের পর বেরিয়ে যান, অনেক ছবি তোলেন তার ভেতরেই, নম্বর আদান প্রদান করেন । তারপর ভুলে যান সব । আমি বাড়ি নিয়ে আসি সেইসব মুখ ও মুখোশ। পড়ি। নিরব ও সরব ! চমকাই, ভয় পাই। আমি কে.পি.পি র মিটিংএও যাই, আক্রাসুর অনুষ্ঠানে যাই, ইভেন আপনারা একটু উগ্র ভাব দেখলেই যাদের কে.এল.ও বানিয়ে দেন তাঁদের নয় , অরিজিনাল কে.এল.ও (এক্স) – এর বাড়ি যাই, খাই, ঘুমাই, শুনি, বোঝার চেষ্টা করি কেন সেই আমলের একজন স্নাতকোত্তর ইতিহাস বা ইংলিশ কে.এল.ও হলেন !!!?তাঁর জীবন যন্ত্রণা আমাকে ভাবায়। লিখবো সেসব নিয়ে হয়তো একদিন । কিন্তু বিশ্বাস করুন আমার ভয় লাগে না । বরং আপনাদের মতো সুক্ষ্ম হৃদাস্ত্র ব্যবহারকারীদের ভয় পাই । আপনারা যে সহাস্য উচ্চারণে একটি জনজাতির মানুষকে অপমান করেন , ‘আত্মঘাতী’ বলে দেন ; সেসবই আসলে কে.এল.ও এবং বোমা তৈরির মূল বারুদ, আন্দলন, মিছিলের মূল শক্তি, জোট বাঁধার বীজমন্ত্র। আপনারা একটি বিশেষ পক্ষ বানিয়ে আলাদা করে দিচ্ছেন অন্য পক্ষদের । এক হতে চেয়ে ভাঙছেন । আপনারাই সলিড ‘আত্মঘাতী কলহপ্রবণ বাঙালি’ । ভুগবে কারা ? আপনারাই … এবং আপনার জন্য অন্যরাও। মিশতে চাইলে পুরো মিশুন দাদারা। রাস্তা খোলা। আধাখ্যাচরা পিরিৎ করবেন না !

আরো পড়ুন –

👉 হয়ে গেলাম (আমরা) ‘আত্মঘাতী কলহপ্রবণ বাঙালি’ !!! – পীযূষ সরকার

👉 ‘মাশান’ ওক ‘মশান’ বনে দিয়া কোন শিপাছেড়া উপন্যাস লেখিছেন সৌমনা দাসগুপ্ত ?