রাজা মহারাজা দের জঙ্গলে শিকার করা নতুন কিছু নয় ভারতের সমস্ত রাজপরিবারের রাজা মন্ত্রী দের এই অভ্যাস ছিল। আজকাল পশু শিকার করা দন্ডনীয় অপরাধ। কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না, It was Big Game Shooting. প্রতি বছর ঘটা করে শিকারে বেরোতেন কোচবিহার, ডুয়ার্স আর আসামের জঙ্গলে।
সাধারনত ফেব্রুয়ারি মাসকেই বেছে নিতেন বাৎসরিক সুটিং শুরু করার জন্য কিন্ত সেরকম বাধাধরা কোনো নিয়ম ছিলনা। তবে বর্ষাকাল বাদ দিয়ে সারাটা বছরই শিকার করতেন। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের কথায় কোচবিহার রাজ্যের আয়তন ছিল প্রায় 1300 স্কোয়ার মাইল, পুরোটাই সমতল ভূমি শুধু গরাধাত (Garadhat) এর দিকটা একটু উচুনিচু। স্বাভাবিক বনভূমি ততটা না থাকলেও বিভিন্ন জায়গায় শাল বন আর অন্যান্য বনভূমি ছিল। গভীর জঙ্গল আর ঘন ঘাস সাধারনত উত্তর আর উত্তর পূর্ব দিকের আসাম, ভুটান সীমান্ত এলাকায় ছিল। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ শিকারে যাওয়ার সময় সব থেকে বেশী যে সমস্যার সন্মুখীন হয়েছিলেন তা হল বিভিন্ন ঝিল বা নদীর চোরা বালি। পুরো কোচবিহারে নদী নালা আর ঝিলে ভরপুর আর এখানকার মাটির বৈশিষ্ট্য হল বেলে দোয়াস টাইপের। উপরে হালকা পলি মাটি আর নিচে বালি মাটি যা খুব বেশী জল ধারন করতে পারে না। যেহেতু এখানে প্রায়সই নদীর গতি পরিবর্তন হয় ঐজন্য বিশাল আয়তন জুড়ে নদীর চরও বিদ্যমান।মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের মতে শিকার করার সবথেকে ভালো পদ্ধতি হল একাকি নিঃসন্দেহে অনুসরন করা যা গন্ডার, মহিষ আর বাইসন এর একমাত্র প্রযোজ্য। কিন্ত একসঙ্গে অনেক শিকারী দলবল নিয়ে গেলে তা হয়ত সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। কিন্ত বাঘ, ভালুক বা চিতার ক্ষেত্রে অবশ্যই শিকারী হাতির পিঠে যেতে হবে। খুব ভোরবেলা শিকারে বের হতে হবে। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ নিজে এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে কোচবিহার, ডুয়ার্স বা আসামের জঙ্গলে বাঘ শিকারের ক্ষেত্রে বন্দুক নিয়ে পায়ে হেটে কখনো সম্ভব নয়। কিন্তু গাছের উপর মাচা তৈরী করে কিছুটা হলেও সম্ভব যা মহারাজা জন্য নিয়মের বাইরে ছিল।
1871 থেকে 1880 সাল পর্যন্ত মহারাজা ও তার সঙ্গী সাথী যা যা শিকার করেছেন তার কিছুটা বিবরণ দেওয়া হল। যা রেকর্ড আছে তা পুরোপুরি নয়, অনেক তথ্য হারিয়ে গেছে।
1871 সাল –
ব্রিটিশ অফিসার তথা মহারাজার বন্ধু W.O.A Beckett, RH Renny, যতীন্দ্রনারায়ন (মহারাজার ভাই) আর মহারাজা শিকারে গিয়ে যা যা শিকার করেছিলেন-
1872 সাল
1872 সালের তেমন কোনো রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যাইনি যা মহারাজার নিজেরও খুব একটা মনে নেই।
1873 সাল
সঙ্গী ছিলেন Smith, Kneller আর মহারাজার ভাই যতীন্দ্র। এই বছরে যা যা শিকার করেছিলেন তা হল-
1874 থেকে 1876 এই তিন বছরে শিকারের রেকর্ড পত্র হারিয়ে গেছিল। যদিও মিনিমাম যদি ধরা যায় তা হল-
আর ছোটোখাটো অনেক ছিল যা তালিকাভুক্ত রাখা হয় না।
1877 সাল
1877 সালের 22শে জানুয়ারি থেকে 8 ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিকার যাত্রা ছিল। সঙ্গী ছিলেন Dr. Simpson, Mr. Southby, Mr. Wilson, Mr. E. Hewett, Mr. Kneller, and Mr. Dalton. এই বছরে যা যা শিকার করেছিলেন তা হল –
এই বার 9ফুট 10ই ইন্চির একটা বাঘ শিকার করেছিলেন তারা যা দ্বিতীয় বৃহত্তম (এতদিন যা শিকার করেছিলেন তার মধ্যে)। বাঘটা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে হাতিগুলিকে আহত করেছিল মরার আগে। “কালা বিসাদ” নামে এক স্থানীয় মাহুত অল্পের জন্য বেঁচে গেছিলেন। কালা বিসাদ দুর্ভাগ্যবশত হাতির পিঠ থেকে পরে গিয়ে বাঘের ঘারেই পরে গিয়েছিলেন যদিও বাঘ তার উপর আঘাত হানেনি আর কালা বিসাদও প্রাণে রক্ষা পেয়ে গিয়েছিলেন। কোচবিহার রাজ্যের ফলিমারি আর টাকোয়ামারি জঙ্গলে 1877 সালেই 20শে ফেব্রুয়ারি থেকে 3 মার্চ পর্যন্ত যা যা শিকার করেছিলেন তা হল
তাছাড়া হগ ডিয়ার, অ্যান্টেলোপ আর বুনো শুয়োরও ছিল। এই যাত্রায় গদাধর নদীতে মাছও শিকার করেছিলেন। 60 পাউন্ডের একটা বিশালকার মাছ শিকার করেছিলেন। ডিসেম্বর এর শেষে আর একবার শিকারে বেরিয়েছিলেন মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ। এবার সঙ্গী ছিলেন Gen Kilnoch(great shikari) , Col. Mont, Kneller, আর Dalton সাহেব। এবার শিকার এ বেরিয়েছিলেন রায়ডাক নদীর চরে ক্যাম্প বানিয়ে। যা যা শিকার করেছিলেন তা হল-
1878 সাল
1878 সালের মার্চ মাসে শিকারে বেরিয়েছিলেন। সঙ্গী ছিলেন Duke Miliano, আর তার ভাই Marquis Pizzardi, Mr. Sage, Dalton, Southby, Simpson, আর Mr. Hewett. শিকারের মধ্যে ছিল-
এপ্রিলে আরো একবার শিকারে গেছিলেন Smith, Kinloch আর Dalton সাহেব। এবার যা শিকার করেছিলেন তা হল-
1879 সাল
1879 সালের 4 মার্চ শিকার যাত্রা শুরু করে 28শে মার্চ শেষ করেছিলেন। শিকারের মধ্যে ছিল-
1880 সাল
1880 সালের 22শে জানুয়ারি শিকার যাত্রা শুরু করেছিলেন। প্রথম 5দিনের শিকার যাত্রায় 5টা বাঘ, 1টা বাঘিনী ছিল এর মধ্যে একটা বাঘ 10ফুট 1.5 ইন্চির ছিল। “পেল্কু” নামে একজন স্থানীয় শিকারীও ছিল এই যাত্রায় মহারাজা ও তার সঙ্গী সাথীদের সাহায্য করার জন্য। 15 ইন্চির মাথার খুলি ও 9ফুট 11 ইন্চি লম্বা বাঘ শিকার করেছিলেন মহারাজা ও তার সঙ্গী সাথীরা। এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে Mr. Traford, Rome, Cammell, Gordon, Pattison, Kneller ও মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ বারোবিশায় 2টা বাঘ শিকার করেছিলেন। তারপর পারগাও এ 2টা মহিষ শিকার করার পর খাগরাবাড়ির দিকে রওনা হয়েছিলেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত আর তেমন কোনো শিকার যাত্রা ছিলনা এই বছর।
Related Posts
Letter to Dr. B.C. Roy from Pvt. Secretary – Sardar Vallabhai, 1948- regarding Cooch Behar and Tripura
কোচবিহারের ঐতিহ্য – সাগর দিঘি 1807
Incredible Northeast India – Open Up