কর্ণী গান

কর্ণীকরণ (পূজা ?) কর্ণী গান: কণেক আলোচনা ।

ভূমিকা/ভনিতা:

আগিলা দিনোৎ যেলা চিকিৎসা বিজ্ঞান হায় দুনিয়াৎ উয়ার জাল নাই ছড়ায় সেলাও মান্সি বা পত্তিতা জাতি/ট্রাইব/কম্ব নিজের মোতন করি রোগ ব্যাদির হাত থাকি বাচিবার পথ বিচিরি গেইসে আর রুগির আরৈগ্যর বাদে চেষ্টা করি গেইসে । বিভিন্ন গছের ঠেইল্ পাতারি ছাল শিপার গুণাগুণ অন্সে তাক্ ঔষধ হিসাবোৎ ব্যবহার করিসে । মূলত সেটে থাকি উৎপত্তি হুসে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রর । যাহ্মা এইমোতন চর্চা করি গেইসে উহ্মাক হামা কবিরাজ বুলি জানি । এটে একটা কথা কয়া থোয়া ভাল যে কবিরাজ আর ওঝা কিন্তুক একে না হয় । ওঝা হৈল্ তায় যায় ঝারাফোকা জলপোড়া ত্যালপোড়া দেয় । যুদিও কবিরাজি আর ওঝালি কোন সমে একটে হয়া যায় । মানে যায় কবিরাজি করে তাক ওঝালি করিবারও দেখা যায় । এই দুইটা ধারা ক্যাঙ্করি একটে হৈল্ সেটাও খুদ্রি ঘোঙটেবার বিষয় । কিন্তুক এইটা ঠিক যে কবিরাজির সোতে ওঝালি একটে হবার কারণে প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষতি ছাড়া লাভ নাই হয় । যাই হৌক্ কোচ রাজবংশী সমাজোৎ একসমে এই চিকিৎসাক ভিত্তি করি কর্ণী গান নামে এক ধরনের গানের প্রচলন হয় । যাক কবিরাজি গানও কওয়া হয় । এই কর্ণী গানোৎ কবিরাজি আর ওঝালি দুইটা ধারারে মিশোল দেখা যায় । বিভিন্ন মারণ ব্যাধির হাত থাকি অক্ষা পাবার বাদে একসমে এই সমাজের চিকিৎসকের ঘর নিরাপদ দূরত্বৎ ডেরা করি ব্যধিগ্রস্ত মান্সিগিলাক্ জরো করি চিকিৎসা করিসে জরিবুটি দিয়া । সেইসমে ত্রিবিধ শান্তির বাদে (ওসুক্ ঝোনে গাওৎ না ছড়ি যায় তার বাদে) একমোতন গান করিসে ডেরাৎ, যাক কর্ণী গান হিসাবে জানা যায় ।

গান/কর্ণীকরণ:

ত্রিজগতের গোসাই মুই করিয়া কর্ণীকরণ
যতরোগ সারেচে ধরিত্রিক নকরিম পালন
গোসাই মোর নাম ত্রিপুরারী সাধন
এক নাম ষোলোপাণী, এক নাম বিষ্ণু
এক নাম ব্রহ্মা মোরে, নর আদি দেবগণ
সবারে দোহাই ।
চারি যুগের গোলাই মুই থাক বৈকুণ্ঠ ভরিয়া
সর্ব দেবদেবী নর আদি, স্থাবর জঙ্গমে পশুপক্ষী
করেমোর সাধনা ।
পঞ্চ প্রদীপে চাইলন খান, নরগণে রাখে মান
সদায় মুই থাক তারে স্থান ।
দুঃখে সুখে যতজন করেচছে মোর সাধনা
সূর্য সাক্ষি করিয়া পালন
কিবা রাজা কিবা ফকির
সগাকে রাখ সুস্থির
আখড়া খান মোর যুগল বৈকুণ্ঠ ধাম
ঘরে ঘরে থাক মুই
আখড়ারূপে জানিনু মুই
সগায় রাখে লক্ষী নারায়ণ নাম
গোসাই তিলকের পতি
ভক্তক দিসে স্বরুপসাথি
দঃখে সখে করেছে পালন
পঞ্চপ্রদীপে চাইলন খান, নরগণে রাখে মান

সদায় মুই থাক তারে স্থান ।

বিশল্যকরণী হাপুনি পান, মানিমুনি কালাচিতা নাম
নালনীল হরসিতি, পাকঠিয়া গছের গোড়,
ভুইকুমুড়া, ডন্ডকলস দিয়া বান্ধিনু ওষুধের পুর,
চালেয়া পঞ্চপ্রদীপ করিয়া সূর্যস্মরণ
আখেরায় রোগ সারিবে শিব পার্বতী ওগো লক্ষ্মী নারায়ণ । ( গান জোগাড়িঞা: দ্বীপেন রায় । জোগানিঞা: রাধানাথ ডাকুয়া, ডাকুয়াপাড়া, ধর্মপুর, ময়নাগুড়ি)
আলোচনা: কর্ণীকরণ বা কর্ণী গান সংস্কার না কুসংস্কার এই বিষয়ৎ কণেক সমালোচনার দরকাল । গানকান যুদি লৈক্ষ্য করা যায় দেখা যাবে যে শ্যাষের পাকে কিচু গছ গাছালির নাম উল্লেখ করা হৈচে । যাঞ জানেন উহ্মা সেইল্লার ঔষধি গুণ সম্বন্ধে অবগত থাকিবেন । ইয়াতে আগিলা দিনার চিকিৎসার একেনা রূপ হাহ্মা পাবার পারি । যাক হাহ্মা সংস্কার কবার পারি । পারি কি, সংস্কারে । উল্টা পাকে অজ্ঞাত শক্তির ঠে মাথা নত করিয়া গানের বাকি যে কথালা, যেইল্যা দিয়া ব্যাধি না সারে । সেই ভাগ কান আধুনিক পরিভাষাৎ কুসংস্কার । মনস্তাত্তিক মেলা কারণ থাকিলেও তাক হাহ্মা এই যুগোৎ কিচুতে গ্রহণ করির পামো না বা করিমো না । পত্তমে উল্লেখ করা কবিরাজি আর ওঝালি ভাগ দুইটাক এটে স্মরণ করা নাগিবে ।

উপসংহার:

পুরাণ কালিয়া সোগ কিচু বিচার না করি সেইল্যাক্ যুদি হাহ্মা ত্যাগ করি তাহৈলে হাহ্মা হাহ্মার সম্পদ হারে ফেলামো । তাতেকরি কর্ণী গানের মোতন বিষয়লা জিয়া থাউক । কিন্তুক্ তাক্ আশ্রয় করি ওঝালি প্রয়োগ ঝোনে না হয় সেই বিষয়ে হামাক সচেতন হবা খাবে । সংস্কার-কুসংস্কারের মৈধ্যৎ যে সূক্ষ্ম ভেদ রেখা সেইকান বুঝি আগে যাওয়ায় সচেতন জাতের কর্তব্য বুলি মনে হয় । না হৈলে জাতির জীবনের ইতিহাস আন্ধারোৎ মিশি যাবে ।

সূত্র/খ্যাও: রাজবংশী সমাজোৎ কর্ণীগান: দ্বিপেন রায় । বাঘধেনুক ।