শোনা যাচ্ছে এবার ছট পূজায় টানা তিন দিন বাংলায় ছুটি থাকছে, 2 নভেম্বর শনিবার ও 3 নভেম্বর রবিবার। তার সাথে সোমবারও ছুটি দেওয়া হয়েছে বাংলায় বসবাসকারী বিহারীদের জন্য। খুব ভালো কথা উৎসবের সময় এক্স্ট্রা ছুটি পেলে কার না ভালো লাগে। সরকারী ভাবে তার বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ হয়েছে।
কিন্ত কথা হল এখানকার যারা আদিবাসিন্দা বিশেষ করে বৃহৎ কোচ রাজবংশী সমাজের মানুষেরা এদেরও তো বারো মাসে তোরো পার্বণ লেগে থাকে। কৈ কোনোদিন তো দেখলাম না যে সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারি করে ছুটি দেওয়া হয়েছে।
আমি কোচ রাজবংশী সমাজ সংস্কৃতির কিছু বিশেষ দিন আর কিছু পূজা পার্বণ বলছি যেমন –
2। ঠাকুর পন্চানন বর্মা জন্মদিবস
3। অষ্টমী স্নান বা অষ্টমী মেলা
4। অক্ষয়তৃতীয়া
5। বিষুয়া উৎসব
6। আমাতি পূজা
7। মদনকাম পূজা
8। ভান্ডানী পূজা
9। গোরনাথ ঠাকুর পূজা
10। দোল সোয়ারী ইত্যাদি
কিন্তু এই পর্যন্ত কোনোদিন দেখলাম না যে রাজ্য সরকার কোচ রাজবংশী সমাজ সংস্কৃতির বিশেষ দিনগুলিতে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে ছুটি ঘোষনা করেছে। বরং অতীত কাল থেকে এটাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে কিভাবে এই সমাজ সংস্কৃতি ধ্বংস করা যায় তার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কোচবিহারের লাইব্রেরী জ্বালিয়ে দিয়ে ভাষা সংস্কৃতির ঐতিহাসিক সব মূল্যবান নথি ও তথ্য লোপাট করা থেকে শুরু করে শহরান্চলে মাশান ঠাকুরের পূজার জন্য আবেদন খারিজ করা তথা জায়গা না দেওয়া। আমি জানি না কোচ রাজবংশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বগণ এটাকে কিভাবে গ্রহণ করে। কারণ সাধারন মানুষ যার সিংহভাগ এই সমাজ সংস্কৃতির তারাই ভোট দিয়ে তাদেরকে জিতিয়েছে বা পদ পাওয়ার রাস্তা খুলে দিয়েছে। এবার সেই রাজনৈতিক ব্যক্তিই যদি তার নিজের সমাজ সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞতার ভাণ করে থাকে বা দাবী আদায়ে ব্যর্থ হয় তাহলে রাজনীতি থেকে সরে আসাই ভালো।
কোচ রাজবংশী সমাজ এখোনো ঘুমিয়েই আছে বললেও খারাপ কিছু বলা হবে না। এই সমাজের গ্রাম্য পরিবেশ সন্তানদের সমাজ সংস্কৃতি শেখাতে সক্ষম হয় যা সন্তানরা পরিবেশ থেকেই পেয়ে যায়। কিন্ত এই সমাজের শহরের মানুষের বেশীরভাগই নিজেদের সমাজ সংস্কৃতি সম্পর্কে উদাসীন, তারা বহিরাগত সংস্কৃতি ও ভাষা সহজেই আপন করে নিয়ে নিজের সবকিছু অনায়াসে জলান্জলি দিতে পারে। এই ধারা অতীত কাল থেকেই চালু হয়ে আসছে। এইজন্যই হয়ত জেনারেশন গ্যাপ হয়ে গেছে। এখনকার বাচ্চাদের কথা ছেড়ে দিলাম, আপনি 45-50 বছরের দুজন ব্যক্তি (কোচ রাজবংশী), একজন গ্রামে ছোটো থেকে মানুষ হয়ে শহরে বাস করছে (শহর বলতে ধরুন কোচবিহার সদর) আর একজন ছোটো থেকে শহরেই মানুষ হয়েছে। দুজনের মধ্যে ভাষা কৃষ্টি সংস্কৃতির মারাত্মক পার্থক্য দেখতে পারবেন। শহরে যে ছোটো থেকে মানুষ হয়েছে তাকে হয়ত আপনি কোনো অ্যাংগেল থেকেই কোচ রাজবংশী মনে করতে পারবেন না, উনি হয়ত নিজেও ঐ পরিচয়ে পরিচিত হতে চায়না। তবে কাষ্ট সার্টিফিকেটটা জরুরি।
রাজ্য সরকার ছুটির বিষয় নিয়ে নিশ্চিত বিবেচনা করতে বাধ্য যদি কোচ রাজবংশী সমাজ আরো এগিয়ে আসে।
Related Posts
Dabri bari, Giri and Halua – Aboriginal Culture
Maharani Gayatri Devi and Kamtapuri – Rajbanshi Language.
চাংড়ার পুরানা সেই আড্ডাটা..(আরো একবার)