দেওচড়াই এর ঘূর্ণিঝড় – 1963 সাল

📝শ্রী প্রদীপ সিংহ সরকার, দেওচড়াই 

Date: 23/10/2019

1963 ইং সনের 19 শে এপ্রিল শুক্রবার ( বাংলা ১৯৭০ সালের ৫ ই বৈশাখ )  দেওচড়াই অঞ্চলের তোর্ষা ,কালজানি ও ঘরঘরিয়া নদীর সঙ্গম স্থল থেকে ভয়াবহ ঘূর্ণীঝর উৎপত্তি হয় । ঝরের প্রচন্ড গতিতে দেওচড়াই অঞ্চলের দেওচড়াই গ্রাম সভার  অংশ , ঝলঝলী গ্রামসভার অংশ , চৌকুশী বলরামপুরের অংশ , সন্তোষপুরের অংশ , নাককাটি গাছ অঞ্চলের ধাদিয়াল গ্রাম সভার অংশ , বালাভূত অঞ্চলের বালাভূত , ঝাউকুঠি , গোপালেরকুঠি প্রভৃতি স্থানের অংশবিশেষের উপর দিয়ে আসামের কালডোবা , আগোমনী অঞ্চলের উপর দিয়ে পানবাড়ী অভিমুখে ধাবিত হয়েছিল । দেওচড়াই থেকে পানবাড়ী এই বিস্তৃত এলাকা জুরে ভয়ানক ঘূর্ণীঝড়ের ফলে সবচেয়ে ‌খতিগ্রস্ত এলাকা আগমনী ও কালডোবা । দেওচড়াই থেকে বালাভূত কম খতি হয়নি ।

ঐ দিন আমি ও আমার দিদি অঞ্জলী দি মায়ের সথে বাঘবড়ির পাশে  এক সাগাই বাডিতে বেড়াইতে গেছি । আকাশের দিকে তাকিয়ে মা বুঝতে পারে অবস্থা ভালো নয় । মা আমাদের দুই জনকে বলে বাড়ির দিকে দৌড় দিতে । আমরা দৌড় দিয়ে বাড়িতে আসি । আমাদের কে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে মা বাইরে যায় । দিদি ও আমি দরোজা ফাক করে বাইরের দিকে দেখি । বাতাসের বেগে দরোজা খুলে যায় । আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি অনেক ঘুড়ি উড়ছে আর শো শো শব্দ  । আর মা কাটারী দিয়ে গরুগুলির গলার দড়ি কেটে দিতেছে । ঝড় থামলে জানতে পারলাম ঘুড়ি নয় সব ঘরের টিন । আমাদের মাত্র দুইটি ঘর ভেঙ্গে ছিল ও কিছু বড় বড় গাছ । চতুর্দিকে মানুষের চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ । হ‍্যাবেন দার কাছে শুনলাম সব শেষ ।  কোনো মানুষ আর বেচে নেই ।

পরের দিন সকালে বাবার সাথে দেওচড়াই বাজারে যাই এবং দেখি বাজারে কোনো ঘর বা বাড়ি নেই । নিত্যানন্দ পাল ও সুরেশ চন্দ্র মন্ডল মহাশয়ের  বিরাট বিরাট ঘরের বিশাল খুটি গুলি দাড়িয়ে আছে । দেওচড়াই হাই স্কুল , জুনিয়র বেসিক স্কুল , পরানবালা ছাত্রাবাস , পাটেশ্বরী পাঠাগার ও ক্লাব ,দাতব‍্য চিকিৎসা লয় ,পুরাতন শিক্ষক কোয়ার্টার ইত্যাদি গৃহাদি দুমড়ে মুচড়ে ভগ্ন স্তূপে পরিণত হয়েছে ।        

শুনেছি স্কুলের বোডিং এর একখানি শিলবাটা ঝলঝলীতে নগেন ব‍্যাপারীর বাড়ির কাছে পাওয়া গেছে । হাই স্কুলের  নাম লেখা এক খানি হাই বেন্চ হালাকুড়ায় পাওয়া গেছে । মানুষ ,গরু ,মহিস , ছাগল , ভেড়া ঝরে উড়ে গিয়ে আছার খেয়ে মরে মাঠেই পরে ছিল । গোপালের কুঠিতে একটি মানুষ একটি গাছের মুন্ডিত ডালে বিদ্ধ হয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত্যুবরন করেছিল । এই দৃশ‍্য খবরের কাগজে বেরিয়ে ছিল । একটি মহিষ অদ্ভুতভাবে মৃত অবস্থায় গাছের ভাঙ্গা ডালে ঝুলে ছিল ।

আমার বড় কাকা স্বর্গীয় যতীন্দ্র নাথ সিংহ সরকার  ঐ দিন দেওচড়াই হাই স্কুলের একটি  জরুরী মিটিংয়ে ছিলেন । পরবর্তিতে ওনার কাছ থেকে অনেক ঘটনা শুনেছি ।