ইচ্ছা থাকলে কোচ রাজবংশী মানুষও সংগঠিত ব্যবসা করতে পারে। 

কোচ রাজবংশী মানুষের ব্যবসা এখোনো সীমিত। যেকোনো মফস্বলের হাটে যদি দ্যাখেন তাহলে দেখতে পারবেন প্রতি 100 টা দোকানের মধ্যে বড় জোর 10 – 12 টা দোকান কোচ রাজবংশী মানুষের (ব্যতিক্রম হয়ত কিছু আছে কিন্তু সেটাও নগন্য) অথচ মফস্বলে কোচ রাজবংশী মানুষের জনবসতির ঘনত্ব অনেক বেশী (কুচবিহার জেলার কথা বলছি উদাহরন হিসেবে), দেশী মুসলিম এর সংখ্যা অনেক জায়গাতে বেশী থাকলেও তাদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা এই ব্যবসার ক্ষেত্রে। শহরের কথা তো বাদেই দিলাম। মোটকথা সংগঠিত (organised) ব্যবসার ক্ষেত্রে কোচ রাজবংশী মানুষ অনেক পিছিয়ে। অথচ দেখতে পারবেন অসংগঠিত ব্যবসার ক্ষেত্রে কোচ রাজবংশী বা দেশী মুসলিম মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী বা 80% এর উপরে বলা যেতেই পারে। অসংগঠিত ব্যবসা বলতে যেটা বোঝাতে চাচ্ছি সেগুলি হল –
গরু বা ছাগলের সাপ্তাহিক হাট

শাক সব্জির ডেইলি পাইকারি হাট
আলুর পাইকারি বিক্রি

কাপড় (তাঁতের) বিক্রির হাট

পাট বিক্রি, তামাক বিক্রি

মাছের পাইকারি বিক্রি

ধান বিক্রি বা অন্যান্য ফসল বিক্রি

এইসবই অসংগঠিত, অর্থাৎ ফসলের ন্যাজ্য মূল্য পাওয়াটা নির্ভর করছে অন্যের উপর, দামের কোনো ঠিক ঠিকানা নাই। অন্যরা নিজেদের অধিক মুনাফার জন্য অসংগঠিত ব্যবসায়ী অর্থাৎ কোচ রাজবংশী মানুষের ফসলের দামের নির্ধারন করতেই পারে।

এবার একটা প্রশ্ন চলেই আসে সেটা হল কোচ রাজবংশী অসংগঠিত ব্যবসায়ী বা কৃষকরা কি কোনোদিন খোঁজখবর রাখে যে তাদের ফসল যখন কনজিউমারসরা (end users) কেনে সেই দাম আর তাদের বিক্রিত দামের মধ্যে কত ফারাক এবং কেন ফারাক। এই যে দামের ব্যবধান তার নির্ধারন কে করে। এই ফারাকটা যদি বেশী হত বা কম হত তাতে তাদের কত বেশী লাভ হত বা কম হত।

ধরুন কোচ রাজবংশী অসংগঠিত ব্যবসায়ী 3-4 মাস ধরে কষ্ট করার পর সদর বাজারে বেগুন বিক্রি করলো 10 টাকা কিলো দরে। এবার উনি যখন সদর বাজার থেকে বেগুন কিনতে যাচ্ছেন তার দাম 30টাকা প্রতি কেজি। এই যে 20টাকার তফাৎ এক কেজিতে এর নির্ধারন কে করে? কি হিসাবে করে? অসংগঠিত ব্যবসায়ীর 10 টাকা বেগুনের কেজির দামটা কে নির্ধারন করল?

সদর বাজারের প্রত্যেকটা ব্যবসায়ী কিন্ত সংগঠিত, ওদের ব্যবসায়ী সমিতি আছে, লাইসেন্স আছে।
অসংগঠিত কোচ রাজবংশী ব্যবসায়ীদের কি এরকম কোনো সংগঠন আছে? লাইসেন্স আছে?

অসংগঠিত ক্ষেত্রে কোচ রাজবংশী সংখ্যা বেশী কিন্তু সদর বাজারে সংগঠিত ক্ষেত্রে কোচ রাজবংশী ব্যবসায়ীর সংখ্যা নেই বললেই চলে (কৃষিপন্যই বলছি)। এটা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কোথাও একটা গলদ আছে।

কোচ রাজবংশী মানুষকে বলব আপনারা সদর বাজারের সংগঠিত ব্যবসাতে নামুন। কোনোদিক থেকে বাধা আসলে (বাধা আসলেও আসতে পারে প্রথম প্রথম) নিজেরাই সংগঠন বানান আর অসংগঠিত মানুষদেরও উৎসাহ দিন। সবসময় দলগতভাবে কাজ করা শিখতে হবে, একা কিছুই করতে পারবেন না।

আর একটা বিষয় হল কোচ রাজবংশী মানুষ আবেগ, ভাইচারা, আর ব্যবসা অনেক সময় গুলিয়ে ফেলে নতুন নতুন যদি কেউ ব্যবসা শুরু করে। যেটা কখনোই করা উচিত নয় দোকানদার আর খদ্দের দুজনকেই।
উদাহরণ হিসেবে বলছি – ধরুন শহর থেকে গ্রামে যাচ্ছেন অটো বা টোটোতে করে। এবার টোটোর চালক পরিচিত জ্ঞাতি গোষ্ঠীর মধ্যে হতেই পারে। এখানে কয়েকটা ভাবনা আসতে পারে-
1. আপনি ভাবছেন জ্ঞাতি ভাই হয় টোটোর ভাড়া যদি দিই কেমন ভাববে।
2. আপনি ভাবছেন জ্ঞাতি ভাই তো টোটোর ভাড়া দেওয়ার দরকার নেই। পয়সা বেচে গেল।

3. টোটো চালক ভাবছেন কেন যে উঠল পয়সাটা বোধায় পেলাম না।

3. টোটোচালক ভাবছেন পয়সাটা চাইব কি করে জ্ঞাতি ভাইয়ের কাছ থেকে।
এইরকম নানানধরনের ভাবনা আসা অস্বাভাবিক নয়।

একটাই কথা বলব জ্ঞাতি ভাই কেন নিজের ভাই হলেও আপনাকে পয়সা দিতে হবে আর টোটোচালককেও একই কথা আপনাকেও পয়সা নিতে হবে নিরদ্বিধায়। এটা শুধু টোটো নয় যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই। আত্মীয়তা আর ব্যবসা দুটোকে আলাদা ভাবে স্থান কাল পাত্র হিসেবে বিচার করা আবশ্যক।
অবশেষে একটা কথাই বলব-

অসংগঠিত ব্যবসায়ীরা আপনারা সংগঠন বানান আর সংগঠের অফিস যেন সদর বাজারে হয় যেখানে আপনারা আপনাদের কৃষিপন্য বিক্রি করেন। আপনাদের সংগঠন আর খুচরা ব্যবসায়ীর সংগঠন যেন মিলে মিশে না যায়।

দরকারে প্রত্যেক পন্যের জন্য আলাদা আলাদা সংগঠনও বানাতে পারেন যার কন্ট্রোল আপনাদের হাতেই রাখবেন। এরজন্য সবার সাথে পরিচয় বা কন্টাক্ট নম্বর রাখা জরুরী /whatsapp group বানান।

তাঁতের কারিগর আপনাদেরকেও একই কথা। আপনারা পরিশ্রম করেন আর মুনাফা লুঠে অন্য কেউ। আপনারা তুফানগঞ্জের মত জায়গায় registered sales and marketing দপ্তর খোলেন নিজেদের প্রচেষ্টায়, নিজেরাই দাম নির্ধারণ করুন আপনাদের উৎপাদিত দ্রব্যের, সবার সমান লাভ, লোকসান হলে সবার সমান লোকসান(সঠিক দিশা থাকলে কখনোই লোকসান হয় না) । আপনারা যদি সংগঠিত হতে না পারেন তাহলে কলুর বলদের মত সারাজীবন খাটনিই করে যাবেন লাভের গুড় অন্য কেউ খেয়ে যাবে।
শেষে, আপনাদের কাজ আপনাদেরকেই করতে হবে। কেউ করে দেবে না।