কতিপয় শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত কোচ রাজবংশীর ভূমিকা /ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতি /সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতি

ভুমিপুত্র মানুষ বিশেষ করে কোচ  রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষদের যেকোনো সংগঠন সে সামাজিক হোক বা সাংস্কৃতিক হোক, কিছুটা সচল হলেই অনেকে রে রে করে ওঠে, অনেকে আবার ব্যঙ্গ করে বলে এদের আবার কি সংস্কৃতি, এদের আবার কিসের সংগঠন, এরা আবার কিসের আন্দোলন করে, “বিচ্ছিন্নতাবাদী” মনোভাবের মানুষদের কঠিন শাস্তি দেওয়া উচিত ইত্যাদি ঋণাত্মক কটুক্তি ও মনোভাব।সবথেকে দুঃখজনক ব্যাপার হল যখন একজন কোচ রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষও এই ঋণাত্মক ভাবনা পোষন করে স্বজাতির আত্মসম্মানের, আত্মনির্ভরের, ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলনের উপর। বেশীরভাগ শিক্ষিত কোচ রাজবংশী মানুষ যারা প্রতিষ্ঠিত এবং দেশ দুনিয়ার খবর রেখে চলে তাদের অধিকাংশকেই দেখা যায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে। তারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে এগিয়ে কিন্তু অন্যভাবে, অন্যের ধার করা সামাজিক বুনিয়াদ ও তাদের সংস্কৃতি নিয়ে, নিজের সমাজকে পিছনে রেখে।শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিতদের অধিকাংশই স্বজাতি মানুষের আন্দোলনের খবর রাখে কিন্ত সেটা বাংলা খবরের কাগজে।

1990 সাল থেকে 2000 সাল বা তার পরবর্তী কিছুটা সময় সেরকম ভাবে ইন্টারনেট বা সোসাল মিডিয়া চালু হয়নি, সাধারন মানুষ যা খবর পেত তা প্রিন্ট মিডিয়াতে বা টিভি কিংবা রেডিওতে। সেই সময়ে অনেক সাধারন শিক্ষিত কোচ রাজবংশী মানুষের মুখে শোনা যেত স্বজাতি মানুষের আন্দোলনের নিন্দার কথা, তাদের নেতাদের নিন্দার কথা। যেন সাধারন অসহায় মানুষগুলো সখে আন্দোলন করছিল, সখে ভুখ হরতাল করছিল, সখে চড়া রোদে রাস্তার উপর ধর্না দিচ্ছিল। অনেক শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত মানুষের মুখে এও শুনেছিলাম নেতাগুলো নাকি সাধারন অশিক্ষিত মানুষদের ভুল বুঝিয়ে পথে নামিয়েছিল। নেতাগুলো নাকি বড় রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গটআপ গেম খেলছিল আর সাধারণ আন্দোলনকারী মানুষদের ঠকাচ্ছিল।সেইসব শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত স্বজাতি (?) মানুষদের কাছে একটা ছোট্ট প্রশ্ন – তারা যে এত খবর পেয়েছিল (গট আপ গেম, ঠকানো ইত্যাদি), কে দিয়েছিল এইসব খবর? বাংলা দৈনিক কোনো সংবাদপত্র? আপনারা কখনো আন্দোলনের মাঝখানে দাড়িয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছিলেন সাধারন মানুষের আবেগকে? আন্দোলনের মাঝখানে দাড়িয়ে নেতাকে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন? সেইসকল নরমপন্থী সংগঠনের অন্তরে প্রবেশ করে কখনো কী প্রশ্ন করেছিলেন কেন এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল? হলফ করে এখনো বলা যায় শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত কোচ রাজবংশী মানুষদের বেশিরভাগ জানেইনা যে বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর অধিকাংশই কোচ রাজবংশীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যপারে কোনো মাথাব্যাথা নেই, বরং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মাথাব্যাথা আছে কিন্ত সেটা যে সহযোগী হিসেবে নয় সেটা যদি শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত বাবুগন বুঝতে না পারেন তাহলে তাদের এই শিক্ষার কোনো মূল্যই নেই। আর সবকিছু বুঝেও যদি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে তাহলে তাকে অসামাজিক, স্বার্থপর ছাড়া অন্য আরো বিশেষন আপাতত খুঁজে পাওয়া গেলেও লেখা যাচ্ছেনা। 

অনেক প্রতিষ্ঠিত শিক্ষিত কোচ রাজবংশী মানুষ আবার নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলত আন্দোলনকারী বা আন্দোলনের সঙ্গে ছিটেফোটা যুক্ত আছে এই রকম মানুষ বা তাদের পরিবারের সঙ্গে যাতে তাদের পরিচিত অন্য জাতি বা সম্প্রদায়ের মানুষ অন্যরকম ভেবে না বসে বা অন্যরকম তকমা লাগিয়ে না দেয়।কতিপয় এই শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিতদের দেখবেন তারা শুধু জাতির “রাজকীয় নাম” নিয়ে বিচলিত, দুধের ক্ষীরটা আলাদা করে তুলে নিয়ে বাকি অংশটা ডাস্টবিনে অবলীলায় ফেলে দিতে সদাপ্রস্তুত; অনেকে তো আবার শিক্ষা আর চাকরীর ক্ষেত্র পর্যন্ত নিজের কার্যসিদ্ধি করে এখন নিজের পরিচয় আড়াল করতে ব্যস্ত এক অনর্থক হীনমন্যতা, সংকোচ ব্যধিকে সাঙ্গ করে। “শুধু রাজকীয় মাইথোলোজিকাল শব্দ” তার আগেও কিছু নেই আর তার পরেও কিছু নেই। শুধু নাম নিয়ে এইজন্যই বিচলিত কারন অন্য সমাজের মানুষরা তাকে যেন ছোটো না ভাবে কারন সে যে অন্যসমাজে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে, মিশে গেছে; ঐ সমাজকে সুপেরিয়র আর নিজের সমাজকে ইনফেরিয়র হিসেবে মনে করছে। নিজে কি, সেটার থেকে বড় হল কে কি ভাবছে ওকে নিয়ে বা কি কি ভাবতে পারে। অন্যসমাজ এত বোকা নয় যে “তুমি কেন শুধু নাম নিয়ে ভাব”। অন্যসমাজ যেন দেখতে পায় না যে “নাম” বাদ দিয়ে তোমার আর কোনো কার্যকলাপই নেই। এনাদের অনেকে ভাবেন যে আমরা তো ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প করি, আমরা গরীব ছাত্রদের স্কলারশিপ দেই – এই আমাদের জনহিতকর কার্যকলাপ। শুধুমাত্র ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প আর কিছু জনহিতকর কাজ করলে যদি এত বড় সমাজের বিশেষত্ব আর অস্তিত্ব বজায় রাখা যেত আর এটাই যদি ভেবে থাকেন তাহলে বলার অপেক্ষা রাখে না যে আপনারা মানে কতিপয় শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত কোচ রাজবংশী মানুষেরা – সত্যিই আপনারা অন্তসারশূন্য, আপনাদের নিজের সমাজ সংস্কৃতির উপর শ্রদ্ধা নেই তথা আপনাদের প্রান্তিক অসহায়, অবিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী মানুষগুলোর উপর কোনোরকম সহমর্মিতা নেই। আপনারা পলায়নকারী, আপনারা সমস্যা দেখলেই এড়িয়ে যান যা সমাজের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুখকর নয়। আপনাদের কেউ কেউ হয়ত সুখী হবে নিজের দক্ষতায় কিন্ত অবশ্যই সমাজ বহির্ভূতভাবে, ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতি বিহীন ভাবে। 

3 thoughts on “কতিপয় শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত কোচ রাজবংশীর ভূমিকা /ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতি /সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতি”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *